পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বীমা প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পগুলি বিশেষভাবে সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, এবং অসংগঠিত খাতের কর্মীদের জন্য উপযোগী। সরকারের এই উদ্যোগগুলি নাগরিকদের জীবনের ঝুঁকি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় বড় সহায়তা করে।
এইসব বীমা প্রকল্প যেমন ‘স্বাস্থ্য সাথী’, ‘কৃষক বন্ধু’, ‘সমাজিক সুরক্ষা যোজনা’, ‘জয় বাংলা’ এবং ‘গীতাঞ্জলি’ শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যেও কাজ করে। সরকারের এই উদার নীতিগুলি রাজ্যের জনমানসে স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাস গড়ে তুলেছে।
১. স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প (Swasthya Sathi)
স্বাস্থ্য সাথী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প, যা প্রতিটি পরিবারকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসা পরিষেবা দেয়। এই প্রকল্পের বিশেষত্ব হল, পরিবারের মহিলার নামে স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয় এবং সমস্ত সরকারি ও অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতালে এটি ব্যবহার করা যায়।
উদ্দেশ্য: সমস্ত রাজ্যবাসীর জন্য স্বাস্থ্য বিমা।
বিমার পরিমাণ: বছরে প্রতি পরিবারে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসার সুবিধা।
লাভভোগী: রাজ্যের সব পরিবার (যাদের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী নয়), আধার ও ডিজিটাল রেশন কার্ড আবশ্যক।
কভারেজ: ১,৫০০+ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল।
২. সমাজিক সুরক্ষা যোজনা (Social Security Scheme for Unorganized Workers)
এই প্রকল্পটি মূলত অসংগঠিত খাতে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য তৈরি। তাদের বার্ধক্যকালীন পেনশন, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বা অক্ষমতার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এটি শ্রমিকদের একটি স্থায়ী সুরক্ষা বলয় তৈরি করে।
- উদ্দেশ্য: অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা।
- বিমার পরিমাণ: মৃত্যুর ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত; আংশিক অক্ষমতায় ১ লক্ষ টাকা।
- লাভভোগী: রেজিস্টার্ড অসংগঠিত শ্রমিকরা (যেমন – রিকশাচালক, দিনমজুর ইত্যাদি)।
- পেনশন সুবিধা: ৬০ বছরের পর থেকে মাসিক পেনশন।
৩. জয় জোহার প্রকল্প (Jai Johar Prakalpa)
জয় জোহার প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সামাজিক সুরক্ষা উদ্যোগ, যা রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত প্রবীণ নাগরিকদের জন্য চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব তফসিলি উপজাতিভুক্ত ব্যক্তিরা মাসে ১,০০০ টাকা করে বার্ধক্য পেনশন পান। এটি তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা ও সম্মানজনক জীবনযাপনে সহায়তা করে। জয় জোহার প্রকল্প সমাজের এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য নিরবিচারে সুরক্ষা ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত।
- উদ্দেশ্য: আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা।
- বিমার ধরণ: যদিও এটি সরাসরি বিমা নয়, এটি একটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প।
- সুবিধা: মাসে ১০০০ টাকা পেনশন; প্রয়োজনে মৃত্যুর পর পারিবারিক সহায়তা।
৪. তফসিলি পেনশন প্রকল্প (Taposili Pension Scheme)
তফসিলি পেনশন প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি বিশেষ উদ্যোগ, যা তফসিলি জাতি ও উপজাতির প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী তফসিলি জাতিভুক্ত ব্যক্তিরা মাসে ১,০০০ টাকা করে পেনশন লাভ করেন। এই পেনশনটি তাদের জীবনের শেষবয়সে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যাতে তারা মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন। তফসিলি পেনশন প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থা।
উদ্দেশ্য: তপশিলি জাতিভুক্ত প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা।
সুবিধা: মাসে ১০০০ টাকা করে পেনশন।
লাভভোগী: ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে তপশিলি জাতিভুক্ত ব্যক্তিরা।
৫. ফসল বীমা যোজনা
ফসল বীমা যোজনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি কৃষক-সুরক্ষা মূলক বীমা প্রকল্প, যার উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, ঝড় বা অন্যান্য বিপর্যয়ের ফলে কৃষকের ফসলের ক্ষতির ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান। এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের কোনো প্রিমিয়াম দিতে হয় না; সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করলে সরকার ক্ষতিপূরণের টাকা সরাসরি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। এটি কৃষকদের আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক এবং চাষের প্রতি উৎসাহ জোগায়।
- উদ্দেশ্য: কৃষকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করা।
- বিমার পরিমাণ: ফসলের ক্ষতি অনুযায়ী ভরতুকি।
- লাভভোগী: সমস্ত কৃষক যারা সরকারি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন।
- বৈশিষ্ট্য: কৃষকদের কোনো প্রিমিয়াম দিতে হয় না, সরকার পুরোটা বহন করে।