Sneher Paras Scheme: আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আমাদের রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে রাজ্যবাসীদের যাতে কোন গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, আর যদি কোন কারনে কোন সমস্যা চলেও আসে সেই সমস্যার সমাধান করে কিভাবে সহায়তা করা যায় সেই চেষ্টাই করে যায় রাজ্য সরকার।
তাই প্রায়শই রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আসে সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যে। রাজ্যের বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়ে অনেক উপকৃত হচ্ছে। এইরকমই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম এক জনপ্রিয় প্রকল্প হলো স্নেহের পরশ প্রকল্প (Sneher Parash Scheme)। এই প্রকল্পটি মূলত কোভিড মহামারীর সময় লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকরা এই সরকারি সহায়তার কারণে অত্যন্ত উপকৃত হয়েছে। কিভাবে এই প্রকল্প শ্রমিকদের জীবনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং এই প্রকল্প সম্পর্কে আরো বেশ কিছু বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করব আজকের এই নিবন্ধে।
স্নেহের পরশ প্রকল্প / Sneher Parash Scheme
প্রকল্পের নাম | স্নেহের পরশ প্রকল্প |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে |
প্রকল্প শুরু করেছেন | পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | শ্রম দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েছে। |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | এই প্রকল্পটি মূলত কোভিড-১৯ অতিমারির সময় চালু হয়েছিল এবং বর্তমানে বন্ধ বা অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | রা, যাদের কাজ বা উপার্জনের উৎস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল |
আবেদনের বয়স সীমা | নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা ছিল না; প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকরা আবেদন করতে পারতেন |
কি কি সুবিধা পাবেন | পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আটকে পড়া শ্রমিকদের এককালীন ₹১০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতো |
আবেদনের স্ট্যাটাস চেক লিঙ্ক | https://wb.gov.in |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | https://jaibangla.wb.gov.in |
স্নেহের পরশ প্রকল্প আসলে কি?
What exactly is the Sneher Paras Scheme?
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বপ্রথম ২০২০ সালের ২০ শে এপ্রিল এই স্নেহের পরশ প্রকল্পটি (Sneher Parash Scheme) চালু করেছিলেন। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কভিডি-১৯ মহামারীর পরিস্থিতিকালীন লোকডাউন এর সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
কোভিড পরিস্থিতিকালীন লকডাউন এর কারণে অন্য রাজ্যে আটকে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শ্রমিকরা তাই পরবর্তীকালে এরকম পরিস্থিতি আবার আসতে পারে তাই সেই লকডাউনের সময় থেকেই রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে এককালীন ১০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার এক প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পই অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প স্নেহের পরশ প্রকল্প নামে পরিচিত।
এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিকদের অর্থাৎ যারা পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা কিন্তু কাজের সূত্রে অন্য রাজ্যে যেতে হয় তাদের জরুরি প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি অর্থ সরাসরি উপকারভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়।
স্নেহের পরশ প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা :
Eligibility requirements to enroll in the Sneher Paras Scheme:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- লকডাউনের সময় অন্য রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিক হতে হবে।
- আবেদনকারীর অবশ্যই একটি বৈধ ভারতীয় ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
স্নেহের পরশ প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
Documents required to register Sneher Paras Scheme:
- আবেদনকারীর পরিচয় পত্র অর্থাৎ আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড অথবা প্যান কার্ড ।
- পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র ।
- আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস ।
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আবেদনকারী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের কোন প্রতিনিধির নাম এবং তার সাথে সম্পর্ক কি ও সেই প্রতিনিধির মোবাইল নাম্বার দিতে হবে ।
- আবেদনকারী নিজের চালু থাকা ফোন নাম্বার।
- বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক অন্য যে রাজ্যে কাজ করছে সেই রাজ্যের ঠিকানার প্রমাণ ।
স্নেহের পরশ প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়ার আবেদন পদ্ধতি:
Application procedure for enrollment in the Sneher Paras Scheme:
- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের “ওয়েস্ট বেঙ্গল স্নেহের পরশ” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। আবেদনকারী কে সর্বপ্রথম নিজেদের মোবাইল ফোনে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে।
- Google Play Store থেকে এই App টি খুব সহজেই ডাউনলোড করা যাবে অথবা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে wb.gov.in হোম পেজে জয় বাংলা লিংক থেকেও এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করা যায়।
- এরপর অ্যাপটি open করলে একটি ফর্ম আসবে সেই ফর্মে আবেদনকারীর পার্সোনাল ইনফর্মেশন পূরণ করে এবং বিভিন্ন ডকুমেন্টস আপলোড করে Submit করে দিতে হবে।
- আবেদন জমা দেওয়ার পর যাচাইয়ের মাধ্যমে আবেদনকারীকে সিলেক্ট করা হবে এবং তার দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে অর্থ সরাসরি স্থানান্তরিত হয়ে যাবে।
স্নেহের পরশ প্রকল্পের উপকারিতা কি কি ??
What are the benefits of the Sneher Paras Scheme??
- এককালীন আর্থিক সহায়তা – পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ₹১০০০ টাকা এককালীন অনুদান দেওয়া হয়।
- সরাসরি ব্যাংকে টাকা জমা – উপকারভোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হয়, কোনো দালালের টাকা আদান প্রদানের ব্যবস্থা নেই।
- সহজ অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া – মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করা যায়, ফলে যেকোনো জায়গা থেকে সহজে ফর্ম পূরণ করা যায়।
- পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সহায়তা – যারা লকডাউনের সময় অন্য রাজ্যে আটকে পড়েছিলেন, তাদের জন্য এই প্রকল্প ছিল এক বড় আশীর্বাদ।
- কোনো রকম ফি লাগে না – আবেদন করতে কোনো ফি অর্থাৎ অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয় না, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
উপসংহার :
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই স্নেহের পরশ প্রকল্পটি (Sneher Parash Scheme) এক অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ বলা যেতে পারে কারণ এই প্রকল্পটির লকডাউন এর মত কঠিন সময়ে রাজ্যের বাইরে আটকে পড়া শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল অবিকল যেন মায়ের স্নেহের মতো করেই।
এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্য নয় এই প্রকল্প হলো সমস্যায় জর্জরিত শ্রমিকদের আশা, সহানুভূতি ও পাশে দাঁড়ানোর এক নির্ভরতার প্রতীক। এই স্নেহের পরশ প্রকল্পটি দেশের কোভিড ১৯ এর লকডাউনের সময়ের এক মর্মান্তিক পরিস্থিতিতেও হাজারো শ্রমিকের মুখে এনে দিয়েছিলে শান্তির হাসি। সত্যিই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই প্রকল্পটি সংকটকালে রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ।
লকডাউন এর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও স্নেহের পরশ হয়ে উঠেছিল বহু মানুষের কাছে এক সহানুভূতির প্রতীক, তাই সরকারের এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতেও দরিদ্র শ্রমজীবী এবং মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
স্নেহের পরশ প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক :–
স্নেহের পরশ প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করার লিঙ্ক | Click Here |