Public Provident Fund : ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিনিয়োগ শুরু করতে হবে। কিন্তু অনেকেই ভয় পান সঠিক খাতে বিনিয়োগ করতে না পারলে সম্মুখীন হতে হবে বড়োসড়ো ক্ষতির। বর্তমানের বিভিন্ন ধরনের মিউচুয়াল ও চিট ফান্ড রয়েছে বিনিয়োগ করার জন্য। তবে আমরা বলব প্রথম দিকেই এসব খাতে বিনিয়োগ না করে কোনো সরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ভালো।
আজ এমনই একটি সরকারি বিনিয়োগ স্কিমের সম্পর্কে আপনাদের বলব। আমরা কথা বলতে চলেছি পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এর সম্পর্কে। এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে পেয়ে যাবেন কর ছাড়ের সুবিধা।
এখান থেকে আপনারা প্রয়োজনে ঋণ নিতেও পারবেন। কারা বিনিয়োগ করতে পারবে এই স্কিমে? ন্যূনতম কত টাকা বিনিয়োগ করা যাবে? কিভাবে বিনিয়োগ করতে পারবেন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এ? কী কী সুবিধা রয়েছে এতে? এই ধরনের প্রয়োজনীয় সব উত্তর জানতে আমাদের প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund) কী?
বিস্তারিত তথ্যে যাওয়ার আগে একবার চট করে নেওয়া যাক পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund) কী? এটি ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত একটি বিনিয়োগ স্কিম। এটি ১৯৬৮ সালের ১ লা জুলাই শুরু হয়েছিল। এই স্কিমে আপনারা বছরে একটি অথবা সর্বাধিক বারোটি কিস্তি একক ভাবে জমা করতে পারবেন।
এখান থেকে আপনারা প্রয়োজনে ঋণ নিতেও পারবেন। আয়কর ধারা ৮০সি অনুযায়ী এই স্কিমে বিনিয়োগকারীরা কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে। নেট ব্যাঙ্কিং, নগদ, চেক ও ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে এই স্কিমে কিস্তি জমা করতে পারবেন। এমনকি বিনিয়োগ শুরু করার পর যেকোনো সময় মনোনীত ব্যক্তির নাম যুক্ত করা যাবে। এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিবিহীন একটি বিনিয়োগ স্কিম।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এর সুবিধা :-
- এই স্কিমের আওতায় আপনারা ভারত সরকার দ্বারা অনুমোদিত যে কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
- যেকোনো সাবালক ব্যক্তি এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে নাবালকের নামেও খাতা খোলা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আইনি অভিভাবককে সাথে থাকতে হবে।
- এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে ছোটো বয়স থেকেই বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় আর বিনিয়োগ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা তৈরি হয়।
- আপনি যদি আয়কর সঞ্চয় করতে চান, তাহলে অবশ্যই পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund) বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ আয়কর ধারা ৮০সি অনুযায়ী এই স্কিমে বিনিয়োগকারীরা কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন।
- দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে চাইলে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এর মতো স্কিম আর পাবেন না। কারণ এতে সর্বনিম্ন ১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যায়। এছাড়া আপনারা চাইলে আরও ৫ বছর সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন।
- তবে কোনো জরুরী পরিস্থিতিতে (শারীরিক অসুস্থতা বা উচ্চ শিক্ষা) বিনিয়োগ শুরুর ৫ বছর পর টাকা তুলে নিতে পারবেন।
- এছাড়া এক বছর পর ক্রেডিট ব্যালেন্সের ২৫ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন।
- এই স্কিমে আপনারা বছরে একটি অথবা সর্বাধিক বারোটি কিস্তি একক ভাবে জমা করতে পারবেন।
- নেট ব্যাঙ্কিং, নগদ, চেক ও ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে এই স্কিমে কিস্তি জমা করতে পারবেন।
- এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিবিহীন একটি বিনিয়োগ স্কিম। এটি ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় আপনাদের লোকসান অথবা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না।
- আপনারা বর্তমানে ৭.১ শতাংশ এতে পাবেন। তবে প্রতি ত্রৈ মাসিকে সুদের হার পরিবর্তিত হয়।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এ বিনিয়োগ করার যোগ্যতা :-
যে কোনো স্কিমে বিনিয়োগ করার জন্য কিছু শর্ত থাকে, যেগুলি বিনিয়োগকারীদের মানতে হয়। তবে এই স্কিমে বিনিয়োগ করার জন্য বিশেষ কোনো শর্ত নেই। মাত্র দুটি নিয়ম মানলেই চলবে।
- এই সরকারি স্কিমে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। তবে একজন নাবালক শিশুর পক্ষে আইনি অভিভাবকের সম্মতি থাকা বাধ্যতামূলক।
- এই স্কিমে একই নামে একটি মাত্র একাউন্ট খোলা সম্ভব। যদি কোনো কারণে দ্বিতীয় একাউন্ট খোলা হয়, সেটি বাতিল বলে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় একাউন্টে কোনো সুদ পাবেন না।
কত টাকা বিনিয়োগ করা যাবে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এ?
বিভিন্ন আয়ের মানুষ সহজেই এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। নিম্ন আয় থেকে শুরু করে উচ্চ আয়ের মানুষ নির্দ্বিধায় এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুবিধা পাবেন। আপনি একটি অর্থ বছরে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। আবার চাইলে সর্বাধিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন সরকার এই বিনিয়োগ স্কিমটি দেশের সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবেই ডিজাইন করেছে।
কত সুদ পাবেন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এ?
এই স্কিমের সুদের হার নির্ভর করে সরকারি নির্দেশের ওপর। প্রতি ত্রৈমাসিকে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এর সুদের হার পুনর্নির্বাচন করা হয়।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এর প্রয়োজনীয় নথিপত্র :-
এই স্কিমে বিনিয়োগ করার জন্য কয়েকটি ডকুমেন্ট তথা নথিপত্র আপনাকে জমা করতে হবে। সেগুলি হলো –
ব্যাংক থেকে পাওয়া আবেদনপত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করে আপনাকে নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা করতে হবে। আর তার সাথেই অ্যাটাচ করে দিতে হবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র গুলি-
- আধার কার্ডের ফটোকপি
- প্যান কার্ডের ফটোকপি
- এছাড়া বৈধ পরিচয় পত্র জমা করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি যে কোনো ডকুমেন্টের ফটোকপি জমা করতে পারেন।
- এর পাশাপাশি লাগবে ঠিকানার প্রমাণপত্র। সেক্ষেত্রে আপনারা ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি যে কোনো ডকুমেন্টের ফটোকপি জমা করতে পারেন।
- অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- এছাড়া একটি মনোনয়ন পত্র জমা করতে হবে।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ পিপিএফ (Public Provident Fund)-এ মনোনয়নের নিয়ম :-
- একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে প্রতিটি মনোনীত ব্যক্তি পিছু শতাংশ নির্ধারণ করে দিতে হবে।
- নাবালকের ক্ষেত্রে মনোনয়ন করা যাবে না।
- অ্যাকাউন্ট হোল্ডার নিজের স্ত্রী, সন্তান, বাবা মা , আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের মনোনয়ন করতে পারবেন।
- বিনিয়োগ শুরু করার পর যেকোনো সময় মনোনীত ব্যক্তির নাম যুক্ত করা যাবে।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক :–
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Click Here |
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে আবেদনের নিয়মাবলী | Click Here |
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে আবেদন পত্র ডাউনলোড করার লিঙ্ক | Click Here |
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে ইন্টাররেস্ট চেক করার লিঙ্ক | Click Here |