২০১৬ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বারা চালু হয় কৃষকদের জন্য একটি যোজনা যার নাম প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা(Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana), সংক্ষেপে এফ এম এফ বি ওয়াই। ভারত সরকারি প্রকল্পের জন্য ৮৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। কেন কৃষকদের জন্য এই বীমা আনা হলো? এতে একটি শব্দের কী কী সুবিধা হবে এই সমস্ত কিছুই আমরা আলোচনা করব আজকের এই আর্টিকেলে, তার জন্য মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ অব্দি অবশ্যই চোখ রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার বিবরণ / Overview of Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana
প্রকল্পের নাম | প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | বিহার, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, গুজরাট সহ বেশকিছু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ব্যতীত ভারতের বাকিসব রাজ্যে এই প্রকল্প চালু রয়েছে |
প্রকল্প শুরু করেছে | কেন্দ্র সরকার |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ২০১৬ |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | ২০২৪ এ চালু আছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | কৃষকরা |
আবেদনের বয়স সীমা | ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে |
কি কি সুবিধা পাবেন | যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কীটপতঙ্গের উপদ্রব ও রোগ পোকার আক্রমণের কারণে ফসলের ক্ষতি হলে সরকার কভারেজ দেবে |
আবেদনের স্ট্যাটাস চেক লিঙ্ক | Click Here |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Click Here |
বীমা কি(What is insurance)?
প্রথমেই জেনে নেওয়া প্রয়োজন বীমা মানুষকে কিভাবে নিরাপত্তা দেয়। বীমা হল একটি কৌশল বা হাতিয়ার যা জীবনে বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করে। বড় ক্ষতি ভাগ করে নেবার একটা উপায়। অনেকের ছোট ছোট অবদানের মাধ্যমে সঞ্চিত তহবিল থেকে লোকেদের ক্ষতিপূরণ করা হয়। বীমা মানুষের ব্যবসা বা জীবনে অপ্রত্যাশিত কোন ক্ষতি থেকে ক্ষতিপূরণ করায় যা মানুষকে আর্থিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
ফসল বীমা কেন প্রয়োজন(Why is crop insurance necessary) ?
কৃষকের জীবনে চাষের অনিশ্চয়তা, বাড়তি ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করার একটি উপায় হল এই শস্য-বীমা। যেকোনো সময় ফসলের ব্যর্থতা বা অপ্রত্যাশিত কোন ক্ষতির হাত থেকে তাঁকে বাঁচাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার উদ্দেশ্য / Objectives of Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana
এই প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার উদ্দেশ্য(Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana) হল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করা। ফসল বপনের সময় থেকে কৃষকদের ফসল কাটা পর্যন্ত যে কোন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ কীটপতঙ্গের কারণে যদি ফসলের ক্ষতি হয় সে ক্ষেত্রে কৃষকদের নিরাপত্তা প্রদান করাই এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার বৈশিষ্ট্য / Features of Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana
- এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সব ধরনের ফসল যেমন রবিশস্য, খারিফ বাণিজ্যিক ইত্যাদি।
- এই যোজনার প্রিমিয়াম এমনি কম রাখা হয়েছে যা দিতে সুবিধা হয়।তবে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কী রকম। রবি ফসলের জন্য মাত্র ১.৫%,খারিজ শষ্যের জন্য ২ শতাংশ বাণিজ্যিক ও উদ্যান যত ফসলের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ।
- এই ফসল যোজনায় কৃষকদের যাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শেখানো যায় সেদিকে যথেষ্ট নজর রাখা হয়েছে।
- সরকারি ভর্তুকির কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই ব্যালেন্স প্রিমিয়াম ৯০% হলেও তা সরকারই বহন করবে এমন কথাই স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে।
যে যে বীমা কোম্পানিগুলিতে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার জন্য আপনি আবেদন করতে পারবেন তার তালিকা / List of insurance companies where you can apply for Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana
- বাজাজ আলিয়ান্স জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
- রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
- আইসিআইসিআই নম্বর জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিট।
- এইচডি এফসি ইআরজিও জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
- ইনফো টোকিও জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিট।
- এসবিআই জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড টাটা ।
- এআইডি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
- ইউনিভার্সাল ফ্রম জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
ইত্যাদি ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলি মনোনীত হয়েছে ভারতের ফসল বীমা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য।
বীমা কোম্পানিগুলি কোন কোন ধরনের ফসলের ক্ষতির ক্ষেত্রে বীমা কভারেজ গুলি প্রদান করবে তার বিবরণ(Details of what kind of crop damage insurance companies will provide insurance coverage for) ?
নিম্নে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির বিষয়ে আলোচনা করব যে গুলির ক্ষেত্রে বীমা কভারেজ পাবেন কৃষকরা।
- ফলনের ক্ষতি: ঝড় বজ্রপাত বন্যা খরা ভূমিধ্বস ঘূর্ণিঝড় শিলাবৃষ্টি বা দাবানলের মত প্রাকৃতিক আগুন বা কীট পতঙ্গের আক্রমণে ফলনের ক্ষতি, এই সমস্ত ক্ষেত্রে এই বীমা সমস্ত ঝুঁকি বহন করে।
- রোপনের ক্ষতি: কৃষকরা যদি প্রতিকূল অবস্থায় কিংবা বৃষ্টিপাতের ঘাটতি জনিত কারণে ফসল রোপন করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে কৃষকরা ফসলের ক্ষতিপূরণের দাবি যোগ্য হবেন এবং বীমা রাশির সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দাবী করতে পারবেন তারা।
- স্থানীয় দুর্যোগের ক্ষতি: শিলাবৃষ্টি ভূমিধস প্রভৃতি দুর্যোগের কারণে যদি কৃষকদের ফসলের ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত হবে।
- সাধারণ বর্জন: প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া যদি ফসলের ক্ষতি হয় যেমন যুদ্ধ বা পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা বা অন্যান্য কারণ সেগুলি এই বীমা যোজনা অন্তর্ভুক্ত নয়।
- মাঝামাঝি মরসুমের ক্ষতি: প্রতিকূল পরিস্থিতি যেমন তীব্র করা বা বন্যা ইত্যাদি কারণে ফসলের স্বাভাবিক ফলন না হলে কৃষকরা এই বীমার আওতায় আসবে তবে ফসলের ফলন ৫০ শতাংশ কম হতে হবে।
- ফলন পরবর্তী ক্ষতি: ফসল রোপন করার দু সপ্তাহের মধ্যে যদি ঘূর্ণিঝড় শিলাবৃষ্টি বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে খেতে শুকনোর জন্য কেটে রাখা ফসলের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে কৃষকরা এই যোজনার মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।
ফসলের ক্ষতির সম্মুখীন হলে বীমা কভারেজ দাবি করার পদ্ধতি / Procedures for claiming insurance coverage in case of crop loss /
কৃষকদের জন্য ফসলের ক্ষতি হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি টোল ফ্রি নম্বরে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন টোল ফ্রি নম্বর টি হল ১৮০০-১০৩-৫৪৯০। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সরকার বীমা কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক জেলা আধিকারিক কিংবা জাতীয় ফসল বীমা পোর্টালে গিয়েও বিষয়টি জানানো যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার ক্ষতির মূল্যায়ন এবং প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কি সময়সীমা রয়েছে(What is the deadline for submission of loss assessment and report under Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana) ?
তথ্য পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লোকশান মূল্যায়নকারী নিয়োগ করা হয়। এছাড়াও পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যেই ক্ষতির মূল্যায়নের কাজটি সম্পন্ন করা হয়। ক্ষতির মূল্যায়নের রিপোর্ট থেকে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
Pradhan Mantri Fasal Bima যোজনাতে আবেদন করার পদ্ধতি/ How to apply in Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana
অফলাইন কিংবা অনলাইন দুই মাধ্যমেই এই প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা আবেদন করতে পারা যায় তবে এক্ষেত্রে আরও একটি সুবিধা হল অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করা কিভাবে করবেন সেই সমস্তটুকুই আলোচনা করব আমরা ।
অফলাইনে আবেদন পদ্ধতি
- যে সমস্ত কৃষকরা অফলাইনে আবেদন করতে চান তারা তাদের কাছের বীমা কোম্পানিগুলিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।
- ফর্মটি যথাযথভাবে পুরনো করতে হবে এবং সাথে দিতে হবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং প্রিমিয়াম।
- আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কৃষকদের একটি রেফারেন্স নম্বর দেয়া হবে যার সাহায্যে আবেদনের স্থিতি জানতে পারবেন তাঁরা।
অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি
- কৃষকরা চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন তার জন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ যেতে হবে হোমপেজে গিয়ে ফার্মার কর্নারের অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- এরপর গেস্ট ফার্মার্সে ক্লিক করে গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ গুলি পূরণ করে একটি নতুন একাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- এরপর কৃষকদের নিউ ফার্মার ইউজার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে লগইন করে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন পদ্ধতি
বর্তমানে মানুষের হাতে হাতে রয়েছে এখন স্মার্টফোন সেই স্মার্টফোনের প্লে স্টোরে গিয়ে ক্রপ ইন্সুরেন্স লিখে সার্চ করতে হবে।
এরপর এপ্লিকেশনটি ইন্সটল করতে হবে মোবাইলে।
এপ্লিকেশনটি ইন্সটল হয়ে গেলে প্রথমেই রেজিস্টার এজ ফার্মার থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে বীমার আবেদন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করুন | এখানে ক্লিক করুন |
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনাতে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনাতে অ্যাপের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার লিঙ্ক | Click Here |
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করার লিঙ্ক | Click Here |