আমাদের দেশ এবং রাজ্যের জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার বিভিন্ন যোজনা এবং প্রকল্প চালু করে। বিভিন্ন দেশবাসি ও রাজ্যবাসী সেই সমস্ত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে আসছে। এরকম অসংখ্য প্রকল্পের মধ্যে রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত পরিযায়ী সহায় প্রকল্প(Parijayee Sahay Scheme) অত্যন্ত জনপ্রিয় ও উপকারী এক প্রকল্প।
এই প্রকল্পটির মূলত রাজ্যের বাইরে থেকে আগত পরিজয়ী শ্রমিকদের জন্য চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে এসে রেশন কার্ডের সুবিধা পায় না তাদের জন্য খাদ্য সামগ্রী অর্থাৎ শুকনো রেশনের সহায়তা প্রদান করা। আজকের এই নিবন্ধে এই প্রকল্প সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কিছু তথ্য জেনে নেব।
পরিযায়ী সহায় প্রকল্প / Overview of Parijayee Sahay Scheme
প্রকল্পের নাম | পরিযায়ী সহায় প্রকল্প |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে |
প্রকল্প শুরু করেছেন | পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | শ্রম দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ২০২০ (কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে) |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | এই প্রকল্পটি মূলত কোভিড পরিস্থিতিতে চালু হয়েছিল, বর্তমানে সীমিত বা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | অন্য রাজ্য থেকে ফেরা পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা |
আবেদনের বয়স সীমা | ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী শ্রমিকরা আবেদন করতে পারতেন |
কি কি সুবিধা পাবেন | পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অন্য রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা প্রতিমাসে ৫ কেজি খাদ্যশস্য অর্থাৎ শুকনো রেশন যেমন চাল গম ইত্যাদি পেয়ে থাকে। |
আবেদনের স্ট্যাটাস চেক লিঙ্ক | https://wb.gov.in |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | https://jaibangla.wb.gov.in |
পরিযায়ী সহায় প্রকল্প আসলে কি?
What exactly is the Migrant Assistance Scheme?
পরিযায়ী সহায় প্রকল্প (Parijayee Sahay Scheme) হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি বিশেষ উদ্যোগ যা মূলত অন্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে কাজের জন্য আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেই সব শ্রমিকদের জন্য দৈনন্দিন জীবনের জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয় যাদের পশ্চিমবঙ্গের রেশন কার্ড নেই অর্থাৎ যারা পশ্চিমবঙ্গে সরকারের রেশন ব্যবস্থা সুবিধা পায় না তাদের জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়।
২০২০ সালে, কোভিড – ১৯ মহামারীর সময় দেশজুড়ে লকডাউন চলাকালীন লক্ষ লক্ষ পরিজয়ী শ্রমিক তাদের কাজ হারান এবং কষ্টের মধ্যে পড়েন। তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা ছিল না, খাদ্যের অভাব দেখা দেয় এবং অনেকেই বহু কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফেরেন। এই কঠিন অভিজ্ঞতা থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার উপলব্ধি করে যে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা প্রয়োজন।
তাই সেই ভাবনা থেকেই ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আদেশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিযায়ী সহায় প্রকল্প (Parijayee Sahay Scheme) চালু করে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের অন্য কোন রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্থায়ী বাসিন্দারা যখন পশ্চিমবঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে বসবাস করে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান করা করা হয়। অর্থাৎ এই প্রকল্পের মাধ্যমে যেই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যের রেশন ব্যবস্থার আয়ত্তে নেই তাদের জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়।
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য :
Key features of the Parijayee Sahay Scheme :
- এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যেরপরিযায়ী শ্রমিকরা প্রতিমাসে ৫ কেজি খাদ্যশস্য অর্থাৎ শুকনো রেশন যেমন চাল গম ইত্যাদি পেয়ে থাকে।
- এই প্রকল্পের আওতায় পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন কুপন প্রদান করা হয় সেই রেশন কুপনের মাধ্যমে স্থানীয় রেশন দোকান থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে তারা।
- যারা পশ্চিমবঙ্গের চিরাচরিত রেশন ব্যবস্থার সুবিধা পায় না অর্থাৎ যারা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নয় অন্য কোন রাজ্য থেকে এসেছে কিন্তু কর্মসূত্রে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা তারা এই সুবিধা পেয়ে থাকে।
- এই প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রম দপ্তর থেকে বিভিন্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম রেজিস্ট্রেশন করেই খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের কর্মসূচি:
Parijayee Sahay Scheme Programs:
- পরিযায়ী শ্রমিকদের চিহ্নিত করা হয়- শ্রম দপ্তরের আধিকারিকরা পশ্চিমবঙ্গে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের খোঁজ নেন এবং তাদের তালিকা প্রস্তুত করেন।
- তথ্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়- চিহ্নিত শ্রমিকদের নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য অনলাইন পোর্টালে নথিভুক্ত করা হয়।
- যোগ্যতার যাচাই – সরকার দেখে নেয় শ্রমিকের পশ্চিমবঙ্গে কোনো রেশন কার্ড আছে কিনা। যদি না থাকে, তবে সে এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য হয়।
- রেশন কুপন প্রদান করা হয়- যাচাইয়ের পরে শ্রমিকদের হাতে রেশন কুপন তুলে দেওয়া হয়।
- রেশন সংগ্রহ করা- শ্রমিকরা নির্ধারিত রেশন দোকানে গিয়ে সেই কুপন দেখিয়ে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাল বা গম অর্থাৎ শুকনো রেশন সংগ্রহ করতে পারেন।
- নিয়মিত আপডেট- শ্রম দপ্তর এবং খাদ্য দপ্তর শ্রমিকদের তালিকা নিয়মিত আপডেট করে যাতে কেউ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের জন্যে প্রয়জনীয় যোগ্যতা:
Eligibility requirements for the Parijayee Sahay Scheme:
- আবেদনকারীকে ভারতের অন্য কোনো রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে বসবাস করতে হবে।
- আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের রেশন ব্যবস্থার আওতায় না থাকা চলবে না।
- যদি পরিযায়ী শ্রমিকের নির্ভরশীল সদস্যরা অর্থাৎ তার পরিবার পশ্চিমবঙ্গে তার সাথে বসবাস করে, তবে তারাও এই সুবিধা পাবেন।
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের আবেদন পদ্ধতি:
Parijayee Sahay Scheme Application Procedure:
- এই প্রকল্পে আবেদনকারীকে নিজে আবেদন করতে হয় না সরকার থেকেই আবেদনকারীকে খুঁজে নেওয়া হয় অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রম দপ্তরের (Labour Department) কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন ব্লক, পৌরসভা এলাকায় গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের চিহ্নিত করেন যারা অন্য রাজ্য থেকে এসেছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন, তাদের নাম এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আসে।
- চিহ্নিত শ্রমিকদের নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, কাজের বিবরণ ইত্যাদি তথ্য অনলাইন পোর্টালে https://wblc.gov.in/ আপলোড করা হয়।
- এরপর সংগৃহীত পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা থেকে নির্বাচিত শ্রমিকদের আবেদনকারী হিসেবে নিজে থেকে সরকারি অফিস বা ক্যাম্পে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ ফর্ম পূরণ করতে নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হয়।
- এরপর চলে যাচাই প্রক্রিয়া(Verification) সরকারি আধিকারিকরা আবেদনকারীর সমস্ত তথ্য যাচাই করেন।
- যদি সমস্ত তথ্য ঠিকঠাক থাকে, তবে আবেদন গ্রহণ করা হয়। তারপর রেশন কুপন ইস্যু
যাচাইয়ের পরে আবেদনকারীকে একটি রেশন কুপন দেওয়া হয়। এই কুপন দিয়ে নির্দিষ্ট রেশন দোকান (Fair Price Shop) থেকে রেশন সংগ্রহ করতে পারে। - কুপন পাওয়ার পর পরিযায়ী শ্রমিকরা মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ৫ কেজি খাদ্যশস্য (চাল বা গম) বিনামূল্যে অথবা সামান্য দামে পেতে পারেন।
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
Documents required for the Parijayee Sahay Scheme :
- পরিচয়পত্র- আধার কার্ড/ভোটার কার্ড / প্যান কার্ড
- ঠিকানার প্রমাণপত্র/Address Proof
- বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের থাকার ঠিকানার প্রমাণ (ভাড়া চুক্তিপত্র/কাজের ঠিকানা ইত্যাদি)
- নিজের স্থায়ী ঠিকানার কোনো প্রমাণ (অন্য রাজ্যের)
- কাজের প্রমাণ/Employment Proof)
- পরিযায়ী শ্রমিকের ঘোষণা পত্র/Self Declaration অর্থাৎ আবেদনকারীকে জানাতে হবে তিনি অন্য রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করছেন।
- আবেদনকারীর সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
গুরুত্বপূর্ণ টিপস্
- এই প্রকল্পের আবেদনের জন্য আলাদা করে বড় কোনো ফি লাগে না অর্থাৎ বিনামূল্যে প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়া যায়।
- শুধুমাত্র অথেন্টিক সরকারি চিহ্নিতকরণ ও যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়া যায়।
- যদি বিশেষ ক্যাম্প হয়, সেখানে উপস্থিত থেকে আবেদন করা আরোও সহজ হয়।
উপসংহার :
পরিযায়ী সহায় প্রকল্প (Parijayee Sahay Scheme) একটি মহৎ উদ্যোগ, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকরা যেমন সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়, তেমনি তাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়। মানবিক ও সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনের পথে এই প্রকল্প সত্যিই এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক :–
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |
পরিযায়ী সহায় প্রকল্পের নোটিফিকেশন ডাউনলোড করার লিঙ্ক | Click Here |