২০১৮ সালের পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চালু করা হয়েছে একটি প্রকল্প, যার নাম মানবিক পেনশন প্রকল্প(Manabik Pension Scheme)। এটি মূলত তাদের আর্থিক সহায়তার এক কর্মসূচি। বর্তমানে এই কর্মসূচি সাফল্য লাভ করেছে। আপনি যদি একজন প্রতিবন্ধী হন তাহলে এই সুযোগ সুবিধা পেতে আজই আবেদন করুন প্রতিবন্ধী মানবিক প্রকল্পে এবং পেয়ে যান খুব সহজেই প্রতি মাসে কিছু নির্দিষ্ট ভাতা।
প্রতিমাসে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হবে সরকারের তরফ থেকে, যাতে করে সমাজে এই সমস্ত প্রতিবন্ধী মানুষদের জায়গা আগামী দিনে আরো মজবুত হয়। আসুন জেনে নিই এই স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ অব্দি পড়ুন আশা করা যায় সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আপনারা এখানেই পেয়ে যাবেন।
মানবিক পেনশন স্কিমের বিবরণ / Overview of Manabik Pension Scheme
প্রকল্পের নাম | মানবিক পেনশন স্কিম |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রকল্প শুরু করেছে | মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | মহিলা ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ বিভাগ |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ২০১৮ |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | ২০২৪ এ চালু আছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা |
আবেদনের বয়স সীমা | নূন্যতম ১০ বছর |
কি কি সুবিধা পাবেন | মাসিক ১০০০ টাকা করে ভাতা প্রদান |
আবেদনের স্টেটাস দেখার লিঙ্ক | Click Here |
আবেদনপত্র | Click Here |
প্রতিবন্ধী কাদের বলা হয়(Who is called Handicapped) ?
“প্রতিবন্ধী” শব্দের অর্থ একজন ব্যক্তি যিনি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে অথবা কোন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অপচিকিৎসায় বা অন্য কোন কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং ভারসাম্যহীনতার জন্য স্থায়ীভাবে কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে অক্ষম।
মানবিক পেনশন স্কিম কি(What is Manabik Pension Scheme) ?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয় এই মানবিক স্কিমটি।এটি শুধুমাত্র ডিজাইন করা হয়েছে সমাজের অক্ষম ব্যক্তিদের জন্যই, যারা অক্ষমতার কারণে কাজ করতে পারেন না তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে তাদের জীবন যাত্রার মানকে বজায় রাখা। মানবিক স্কিম হল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক পেনশন প্রদানের একটি প্রয়াস, ২০১৮ সালে এই স্কিমটি চালু করা হয়।
মানবিক পেনশন স্কিমের সুবিধা / Benefits of Manabik Pension Scheme
সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষরা প্রতিমাসে যাতে ১০০০ টাকা করে পেনশন পায় সে ব্যবস্থায় করা হয়েছে এই যোজনার মাধ্যমে।
মানবিক পেনশন স্কিমটিতে আবেদনের জন্য যোগ্যতা / Eligibility Criteria for Manabik Pension Scheme
- আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া প্রয়োজন। ন্যূনতম ১০ বছরের বাসিন্দা হতে হবে।
- ৪০ শতাংশ বা তার বেশি প্রতিবন্ধকতা থাকতে হবে আবেদনকারীর।
- আবেদনকারী ব্যক্তির বার্ষিক আয় এক লাখ টাকার বেশি হওয়া যাবে না।
- আবেদনকারীকে অন্য কোন প্রকল্পের সুবিধাভোগী হওয়া যাবে না। যেমন বার্ধক্য ভাতা, কৃষি ভাতা, পারিবারিক পেনশন প্রকল্প বিধবা ভাতা ইত্যাদি। যে সমস্ত ব্যক্তিরা এই সমস্ত প্রকল্পের আওতায় ভাতা পাচ্ছেন তাঁরা এই মানবিক স্কিম থেকে বঞ্চিত হবেন।
- সংশ্লিষ্ট মেডিকেল অফিসার দ্বারা শারীরিক কাজের জন্য অনুপযুক্ত সে ঘোষণাপত্র থাকা প্রয়োজন।
মানবিক স্কিমে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস/ Documents required to apply for Manabik Pension Scheme
- প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র জমা দিতে হবে।
- পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা তার প্রমাণ পত্র জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্ট সাইজের ফটো জমা দিতে হবে।
- আধার কার্ড থাকা আবশ্যিক।
- আয়ের শংসাপত্র জমা দিতে হবে।
- মোবাইল নম্বর থাকতে হবে।
- ব্যাংক একাউন্টের বিবরণ জমা দিতে হবে।
- ডিজিটাল রেশন কার্ড থাকতে হবে।
- বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে ভোটার আইডি কার্ড জমা দিতে হবে।
মানবিক পেনশন স্কিমে আবেদনের জন্য আবেদন পত্রটি কোথা থেকে পাবেন(Where can I get the application form for applying for Manabik Pension Scheme) ?
আবেদনের সমস্ত পদ্ধতিটি অফলাইনের মাধ্যমে করতে হবে।পশ্চিমবঙ্গ মানবিক পেনশন প্রকল্পের আবেদন পত্রটি বিনামূল্যে উপলব্ধ রয়েছে বিভিন্ন অফিস গুলিতে। সেগুলি হল:
- ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের অফিস। গ্রামীন এলাকার জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির কার্যনির্বাহী আধিকারিক অফিসেই পাওয়া যাবে এই স্কিমের ফর্ম।
- সাব ডিভিশনাল অফিসারের অফিস। পৌর এলাকার জন্য সাব ডিভিশনাল অফিসারের অফিস থেকে এই স্কিমের ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে।
- কলকাতা মিউনিসিপাল কমিশনারের অফিস । কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের অধীনে এলাকার জন্য ভবঘুরে নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় বা পশ্চিমবঙ্গ ভবন বিধান নগর কলকাতা 91
মানবিক পেনশন স্কিমে আবেদন করার পদ্ধতি/ How to apply in Manabik Pension Scheme
- প্রথমে আবেদন পত্রটির সংগ্রহ করতে হবে এবং তারপর তা যথাযথ তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।
- আবেদনপত্রের সঙ্গে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি গুলি সংযুক্ত করতে হবে।
- সমস্ত নথি সহ আবেদন পত্রটি আবেদনকারী যে অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিল সেই অফিসে গিয়ে জমা করতে হবে।
- পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্বারা ওই আবেদন পত্র যাচাই করা হবে।
- আবেদনপত্র যাচাই করার পর মানবিক পেনশন প্রকল্পের অধীনে প্রতিবন্ধী পেনশনার হিসেবে মাসিক হাজার টাকা করে ব্যক্তির ব্যাংক একাউন্টে দেওয়া হবে।
মানবিক পেনশন স্কিমে এর পূরণ করা আবেদনপত্রটি কোথায় জমা দিতে পারবেন(Where can you submit the completed application form in the Manabik Pension Scheme) ?
মানবিক স্কিমে আবেদন করবার জন্য আবেদনপত্রটি পূরণ করে যে যে অফিস গুলিতে জমা দিতে পারবেন নিচে তার লিস্ট দেওয়া হল।
- এসডিও অফিসে শহর এলাকায় যাকে বলে মহকুমা আধিকারিকের অফিস।
- গ্রামীন এলাকায় ভিডিও অফিস অর্থাৎ ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের অফিস জমা করতে পারেন।
- দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে।
- কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন অর্থাৎ kmc এলাকায় কন্ট্রোলার অফ ভ্যাগ্রান্সির অফিসে জমা করতে পারেন।
মানবিক পেনশন স্কিমে যোগাযোগের নাম্বার ও ইমেল / Manabik Pension Scheme Contact Number & Email
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কমিশনারের অফিস হেল্পলাইন নাম্বার :- ০৩৩-২৩৫৯৭৯৯৭.
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কমিশনারের অফিস হেল্পডেস্ক ইমেল :- com.disabilitywb@gmail.com
- এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যোগাযোগ করতে পারেন রাজ্য কমিশনার পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুবর্ণ ভবন ডিএফ ব্লক সেক্টর ১ বিধাননগর কলকাতা ৭০০০৬৪।
ইতিমধ্যেই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি নাগরিককে ভাতা দিচ্ছেন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বার্ষিক ১২০০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য করা হয়। রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের জন্য ২৪০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা ধার্য করেছে। নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সমাজের অক্ষম ব্যক্তিদের নিয়েও রাজ্য সরকার ভাবতে বদ্ধপরিকর তাদের পাশে সদা সর্বদা তারা যে রয়েছেন তাদের এই কর্মকাণ্ডতেই তা প্রকাশ পায়।
তবে আগামী দিনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এমন আরও বহু স্কিম প্রয়োজন তাদের সমাজে নিজের জায়গা বজায় রাখতে এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে। যে হারে রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের মিলিত প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষের জন্য বিধবা ভাতা লক্ষী ভান্ডার বার্ধক্য ভাষার মতো বহু ভাতা বা স্কিন আনা হচ্ছে সে তুলনায় দেখতে গেলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তেমনভাবে কোন স্কিম এখনো পর্যন্ত আসেনি। আগামী দিনে তাদের নিয়েও আরো বেশি করে ভাবনা চিন্তা করা হবে এমনটাই আশা রাখবো আমরা।