Krishionnati Yojana: যাঁরা আমাদের মুখে অন্ন তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন, দিন শেষে তাঁদের খোঁজই রাখে না কেউ। এইভাবেই সকলের চোখের আড়ালে থেকে যায় কৃষক সমাজ। দিন রাত খেটে চাষ আবাদ করলেও, দেশের কৃষকদের অবস্থা মোটেই সুখের নয়। সে কারণে তাঁদের আর্থিক অবলম্বন হয়ে ওঠার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রচলন করা হয়েছে কৃষন্নতি নামের এক যোজনা। আজকের প্রতিবেদনে আমরা এই যোজনার উদ্যেশ্য, সুবিধা, আবেদন করার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ভাবে জানব।
কৃষন্নতি যোজনা (Krishonnati Yajana) কী?
২০০৫ সালে কৃষকদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করার জন্য ভারত সরকার একটি উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগটিই কৃষন্নতি যোজনা(Krishionnati Yojana) নামে পরিচিত। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা এবং কৃষিকাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলির সামগ্রিক বিকাশের জন্য এই উদ্যোগটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এখন দেখে নেব এই প্রকল্পের প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে।
কৃষন্নতি যোজনার প্রকারভেদ (Types of Krishionnati Yojana )
কৃষন্নতি যোজনার অধীনে মোট এগারোটি প্রকল্প রয়েছে, যা সম্পর্কে নিচে বিশদে আলোচনা করা হল।
- Integrated Development of Horticulture (MIDH) – এই খাতে ব্যয়ের জন্য সরকার বরাদ্দ করেছে ৭৫৩৩.০৪ কোটি টাকা। “হর্টিকালচার” সেক্টর অর্থাৎ উদ্যান পালন বিভাগের সামগ্রিক উন্নতির জন্য এই উদ্যোগ বিশেষ সাহায্য করে। এছাড়াও সবজি, ফুল-সহ নানা ফলনের উৎপাদন যাতে সঠিক হয় এবং কৃষকরাও যাতে যোগ্য সম্মান পান সেদিকেও এই প্রয়াসটি নজর রাখে।
- National Food Security Mission (NFSM) – এই উদ্যোগের জন্য সরকার বরাদ্দ করেছে ৬৮৯৩.৩৮ কোটি টাকা। ধান, গম, তৈলবীজ সহ নানা ফসলের বৃদ্ধি ঘটানো এবং সেই সকল ফসলের নিরাপত্তা প্রদান করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
- National Mission for Sustainable Agriculture (NMSA) – National Mission for Sustainable Agriculture এর জন্য সরকার প্রদান করে ৩৯৮০.৮২ কোটি টাকা। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল, কৃষি পদ্ধতিকে উন্নত করা এবং মাটি, জল প্রভৃতির স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
- Submission on Agricultural Extension (SMAE) – এটি অন্যতম বিশেষ উদ্যোগ কৃষন্নতি যোজনার। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকে ২৯৬১.২৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্প কৃষকদের আর্থিক ভাবে সহায়তার দিকটির দিকে লক্ষ্য রাখে এবং বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ প্রয়োগ করে থাকে।
- Sub-Mission on Seeds and Planting Material (SMSP) – এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল, বীজের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, বীজ সংরক্ষণ করা, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বীজের বৈচিত্র্য আনা। এই উদ্যোগের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯২০.৬ কোটি টাকা।
- Sub-Mission on Agricultural Mechanisation (SMAM) – দেশের প্রতিটি প্রান্তের কৃষকের কাছে উন্নত মানের প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া হোক হল Sub-Mission on Agricultural Mechanisation এর লক্ষ্য। এই প্রকল্পে সরকার ৩২৫০ কোটি টাকা অনুদান দেন।
- Sub Mission on Plant Protection and Plan Quarantine (SMPPQ) – এই প্রকল্পে মূলত ফসলের সুরক্ষার দায়ভার নেওয়া হয়। ইঁদুর, পোকামাকড়, বা কোনও উদ্ভিজ্জ রোগের ফলে যাতে কোনও ফসল না নষ্ট হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে এই উদ্যোগে। সরকার ফসলের সুরক্ষার জন্য এই উদ্যোগটিতে ১০২২.৬৭ টাকা বরাদ্দ করেছে।
- Integrated Scheme on Agriculture Census, Economics and Statistics (ISACES) – এই প্রকল্পে কৃষি সম্পর্কিত নানা অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি অনুধাবন করে তা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
- Integrated Scheme on Agricultural Cooperation (ISAC) – এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল, বিভিন্ন কৃষি সমবায় সমিতিগুলির অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটানো। তাঁতিদের উচ্চ মানের সুতো সরবরাহ করে থাকে এই প্রযুক্তি। এই প্রকল্পে সরকার ১৯০২.৬৩৬ কোটি টাকা অনুদান দেয়।
- Integrated Scheme on Agricultural Marketing (ISAM) – কৃষন্নতি যোজনার এই প্রকল্পটি কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে উন্নত করে। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আছে ৩৮৬৩.৯৩ কোটি টাকা।
- National e-Governance Plan (NeGP-A) – কৃষন্নতি যোজনার ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ আছে ২১১.০৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কৃষকদের কর্ম দক্ষতাকে উন্নত করে তোলে যাতে তাঁরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সকলের চাহিদা অনুযায়ী ফসল ফলাতে পারেন।
কৃষন্নতি যোজনার উদ্দেশ্য (Objectives of Krishionnati Yojana)
প্রতিটি যোজনারই বেশ কিছু লক্ষ্য থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই দেশের কৃষিকাজের উন্নতির জন্য এই যোজনারও কিছু উদ্দেশ্য আছে। এখন সেই সকল উদ্দেশ্য সম্পর্কেই এবার আপনাদের বিস্তারিত জানাব।
- উৎপাদনের হার বৃদ্ধি – এই যোজনার ফলে কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন। উন্নতমানের বীজ, সার, উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে যাতে কৃষি কার্যে উন্নতি ঘটানো যায়, সেটাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
- আয় বৃদ্ধি – আমাদের দেশের বেশিরভাগ কৃষক বন্ধুকেই আর্থিক অভাবের সম্মুখীন হতে হয়। ধার দেনার ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের ঋণের বোঝা বেড়ে যায়। সেই টাকা শোধ করতে না পেরে তাঁরা নিজেদের জীবন শেষ করে। কিন্তু আর যেন কখনো কোনও কৃষককে এমন রাস্তা বেছে নিতে না হয় তার জন্য এই উদ্যোগটি বেশ উপকারী। এই উদ্যোগের ফলে যেমন ফসলের মান ভালো হয়েছে তেমন কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আর্থিক অবস্থা তাঁদের আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
- আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার – এই প্রকল্প, কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সাহায্য প্রদান করে। যার ফলে কৃষকদের চাষ আবাদ করতে বিশেষ সুবিধা হয় এবং এর ফলে তাঁরাও যেন আরো বেশি করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
- ফসলের বৈচিত্র্য – কৃষকদের বেশি করে উৎসাহ প্রদান করা যাতে তাঁরা বাজারের চাহিদা মত নানা রকম ফসল উৎপাদন করতে পারে।
- জল-সেচ ব্যবস্থার উন্নতি – কৃষন্নতি প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, জল-সেচের ব্যবস্থাকে ঠিক রাখা যাতে জমিতে সময়মত সঠিক পদ্ধতিতে জল-সেচ করা যায়।
কৃষন্নতি যোজনার সুবিধা (Benefits of Krishionnati Yojana)
কৃষি শিল্পে উন্নতির জন্য সরকারের অন্যতম বিশেষ প্রয়াস হল কৃষন্নতি যোজনা। এই যোজনার ফলে উপকৃত হয়েছেন দেশের কৃষক শ্রেনী। কী কী সুবিধা পান কৃষকেরা, চলুন দেখে নেয়া যাক।
- উন্নত সামগ্রী – উন্নত সার, বীজ থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তির যোগানও দেয় এই কৃষন্নতি যোজনা। উন্নতি সামগ্রী ব্যবহারের ফলে ফলনের মান যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনই কৃষকদের উপার্জনও ভালো হয়।
- প্রশিক্ষণ – কৃষকেরা আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ নিতে পারেন যা তাঁদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে তোলে।
- সরাসরি বাজারে বিক্রি – কৃষন্নতি যোজনার ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্ষেতে উন্নতমানের ফসল ফলিয়ে খুব সহজেই সেই ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারেন কৃষকেরা। এর ফলে তাঁরা দ্বিগুণ লাভবান হতে পারে।
- প্রযুক্তির ব্যবহার – আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে যেমন ফসলের মান ভালো হয়, তেমনই কৃষকদের শারীরিক পরিশ্রমও কম হয়।
- জলের যোগান – এই প্রকল্পের কল্যাণে উন্নত হয়েছে দেশের জমিগুলিতে জল-সেচ ব্যবস্থা। সে কারণে কৃষকেরা সময় মত জমিতে জল সেচ করতে পারে, ফলে ফসল উৎপাদনে কোনও সমস্যা হয় না।
কৃষন্নতি যোজনায় আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র (Important Documents to apply Krishionnati Yojana)
এই প্রকল্পে আবেদন জানানোর জন্য আপনাকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় নথি প্রদান করতে হবে। যথা,
- পরিচয় পত্র (আধার কার্ড/ ভোটার কার্ড/প্যান কার্ড/বার্থ সার্টিফিকেট)
- ঠিকানার প্রমাণ
- জমির মালিকানার প্রমাণ
- ব্যাংক একাউন্ট নম্বর
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- কৃষি জমি সম্পর্কিত যাবতীয় প্রমাণ
কৃষন্নতি যোজনায় আবেদন করার পদ্ধতি (How to apply at Krishionnati Yojana)
এই প্রকল্পে আপনি যে ভাবে আবেদন জানাতে পারবেন, তা নিম্নরূপ
- আপনার এলাকার জন্য কোন কোন প্রকল্প এই যোজনার অধীনে রয়েছে সে বিষয়ে প্রথমেআপনাকে জানতে হবে। তথ্যটি জানার জন্য আপনি স্থানীয় কৃষি দফতরে যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়াও অনলাইনে কৃষি বিভাগের ওয়েবসাইটে এই বিষয় সংক্রান্ত খোঁজ নিতে পারেন।
- এর পরবর্তী ধাপে আপনাকে, আপনার উপযোগী প্রকল্পের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এটি আপনি অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমেই পেতে পারেন। অফলাইনে আপনি পেতে পারেন কৃষি দফতর থেকে বিনামূল্যে।
- আবেদনপত্রটিতে আপনাকে আপনার যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য, জমির সম্পূর্ণ বিবরণ এবং আপনি যে সুবিধা পেতে চান সেই সম্পর্কে বলতে হবে।
- আবেদনপত্রের শর্ত অনুযায়ী আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় নথি সেখানে জমা দিতে হবে।
- প্রয়োজনীয় নথিসহ পূরণ করা আবেদনপত্রটি কৃষি দফতরে জমা করে দিতে হবে।
কৃষন্নতি যোজনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক :–
কৃষন্নতি যোজনার বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড লিঙ্ক | Click Here |