আজ বিংশ শতকে দাঁড়িয়ে যেখানে নারী পুরুষকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব, সেখানেও বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের। এই সমস্ত সমস্যা সমাধান করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প(Kanyashree Scheme), যা বর্তমানে বিশ্বসেরা প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি।
এই কন্যাশ্রী প্রকল্প নক্সা ও সুশাসন বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য ইতিমধ্যে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই কন্যাশ্রী প্রকল্প কি, এর সুবিধা, প্রকল্পের আবেদন করার নিয়মাবলী সবকিছুই নিচে আলোচনা করা হল-
কন্যাশ্রী প্রকল্পের বিবরণ / Overview of Kanyashree Scheme
প্রকল্পের নাম | কন্যাশ্রী প্রকল্প |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রকল্প চালু করেছেন | মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | 8 মার্চ 2013 |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | 2024 এ সক্রিয় আছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | মেয়েরা |
আবেদনের বয়স সীমা | 13 থেকে 18 বছর |
কি কি সুবিধা পাবেন | 1) k1: বার্ষিক বৃত্তি ₹১০০০/- টাকা 2) k2: এক কালীন বৃত্তি ₹২৫০০০/- টাকা 3) k3: মাসিক বৃত্তি ₹২০০০-₹২৫০০/- টাকা বিজ্ঞান অধ্যয়নরত মেয়েদের প্রতি মাসে ₹২,৫০০/- টাকা করে দেওয়া হবে। 4) বানিজ্য ও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাসিক বৃত্তি ₹২,০০০/- টাকা করে দেওয়া হবে। |
আবেদনের স্ট্যাটাস চেক লিঙ্ক | Click Here |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Click Here |
কন্যাশ্রী প্রকল্প কি(What is Kanyashree Scheme) ?
১৮ বছরের নিচে যাতে কোন মেয়ের বিবাহ না দেওয়া হয় এবং নারী শিক্ষায় যেন অর্থের অভাবে আটকে না যায়, এজন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে চালু করা হয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য / Objectives of Kanyashree Scheme
- কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রতিটি মেয়ে উৎসাহিত হবে স্কুলে যেতে ও তাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারবে ।
- কন্যাশ্রী প্রকল্পটি মূলত প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চালু করা হয়েছে। কমপক্ষে 18 বছরের নিচে কোন মেয়ের বিয়ে না হয় ।
- এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় নারী এবং পুরুষের মধ্যে বিভেদ করা হয়ে থাকে। বাড়ির ছেলেটিকে পড়ানো হলেও নারী শিক্ষার দিকে ততটা লক্ষ্য দিতে দেখা যায় না। এই সমস্যার সমাধান করবে কন্যাশ্রী প্রকল্প।
- মেয়েদের দক্ষতার বিকাশের সাথে সাথে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে তাদের ক্ষমতা উন্নয়ন করা হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
- ছাত্রীদের লেখাপড়ার সম্পূর্ণ বিকাশের দায়িত্ব নিচ্ছে এই প্রকল্প। শুধুমাত্র ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নয় উচ্চশিক্ষার দৈর্ঘ্যরাতে গিয়েও আর্থিক সমস্যার সমাধান করবে কন্যাশ্রী।
- কন্যাশ্রী প্রকল্পটি সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং সম্প্রদায়ের আচরণগত পরিবর্তন বৃদ্ধি করে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা / Benefits of Kanyashree Scheme
তিনটি ভাগে এই টাকা পাওয়া যায় যা, k1, k2 এবং k3 নামে পরিচিত।
- k1: বার্ষিক বৃত্তি ₹১০০০/- টাকা
- k2: এক কালীন ₹২৫০০০/- টাকা
- k3: মাসিক ₹২০০০-₹২৫০০/- টাকা বিজ্ঞান অধ্যয়নরত মেয়েদের প্রতি মাসে ₹২,৫০০/- টাকা করে দেওয়া হবে।
বানিজ্য ও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাসিক ₹২,০০০/- টাকা করে দেওয়া হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পটিতে আবেদনের জন্য যোগ্যতা / Eligibility Criteria for Kanyashree Scheme
বার্ষিক বৃত্তির যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্ত-
- ছাত্রীর বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- নূন্যতম অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী হতে হবে।
- কন্যাশ্রী প্রকল্প যখন চালু হয়েছিল তখন পরিবারের বার্ষিক উপার্জন এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে কন্যাশ্রী সকলের জন্য।
- সরকারি বা সরকার অনুমোদিত যেকোনো বিদ্যালয়ে পাঠরতা হলে এই প্রকল্পের আওতায় আসা যাবে।
- ছাত্রীকে অবিবাহিত হতে হবে।
- যদি কোন আবেদনকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী বা ক্ষমতা সম্পন্ন হয়, যদি তার মা বাবা দুজনেই মৃত হয় তাহলে পারিবারিক বাৎসরিক আয়ের পরিবর্তন হবে ।
কন্যাশ্রী এককালীন বৃত্তির জন্য যোগ্যতা / Eligibility for Kanyashree One time Scholarship
- এক্ষেত্রে ছাত্রীর বয়স ১৮ বছরের বেশি এবং ১৯ বছরের কম হতে হবে।
- ছাত্রীকে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক, ক্রীড়া বিষয়ক ইত্যাদি বিষয়ের মধ্যে যে কোন একটি বিষয়ে পঠন-পাঠনে রত হতে হবে।
- বিশেষ ক্ষেত্রে পারিবারিক বাৎসরিক আয়ের পরিবর্তন হবে।
কন্যাশ্রী মাসিক বৃত্তির জন্য যোগ্যতা / Eligibility for Kanyashree Monthly Scholarship
- আবেদনকারীকে অবশ্যই একজন স্নাতক হতে হবে।
- স্নাতক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৪৫% নম্বর থাকা আবশ্যক।
- এই বৃত্তির জন্য বয়সের কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই।
কারা কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন(Who will benefit from Kanyashree Scheme) ?
- পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হলে তবে এই প্রকল্পের সুযোগ পাওয়া যাবে।
- ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবে।
- কেবলমাত্র অবিবাহিত মেয়েরাই এই ফর্ম পূরণ করতে পারবে।
কারা কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না(Who will not get the benefits of Kanyashree Scheme) ?
- বিবাহিত মেয়েরা এই প্রকল্পের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে না।
- ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের ছাত্রী ব্যতীত অন্য কোন বোর্ডের ছাত্রীরা এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
- ১৩ বছরের নিচে কোন ছাত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদন করতে পারবে না।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস / Documents required to apply for Kanyashree Scheme
- আবেদনকারীর বার্থ সার্টিফিকেট।
- আবেদনকারী যে অবিবাহিতা, সেটি জানিয়ে আবেদনকারীর বাবা বা মা অথবা অভিভাবকের তরফ থেকে একটি বিবৃতি বা প্রমাণপত্র।
- আবেদনকারীর ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার ফটোকপি।
- মেয়ের আধার কার্ড।
- রেশন কার্ড।
- পারিবারিক আয়ের শংসাপত্র।
- আবাসিক শংসাপত্র।
- শিক্ষাগত প্রমাণপত্র,
- পাসপোর্ট – সাইজের ছবি,
কন্যাশ্রী প্রকল্পটিতে আবেদন করার পদ্ধতি/ How to apply in Lakshmir Bhandar Scheme
- প্রথমে কন্যাশ্রী স্কলারশীপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে
- সেখানে রেজিস্ট্রেশনে ক্লিক করুন
- পৃষ্ঠার নিচে স্ক্রোল করে এবং চেকবক্সে টিক চিহ্ন দিতে হবে। ‘এটি ঘোষণা করার জন্য যে আমি নির্দেশগুলি সঠিকভাবে পড়েছি এবং আমি সেগুলি মেনে চলতে সম্মত৷ ‘
- Proceed for Registration অপশনে ক্লিক করুন।
- নিম্নলিখিত পোর্টালে আবেদন করার জন্য নতুন বৃত্তি বা পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদনকারী সংখ্যালঘু ছাত্রদের অনুরোধ করার জন্য একটি পপআপ উপস্থিত হবে ।
- ক্লোজ বোতামে ক্লিক করতে হবে।
- আবেদনপত্রে ৩ নম্বর পাতাটিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাক্ষরসহ আবেদনকারীকে দিয়ে দেওয়া হবে। এটাই যত্ন সহকারে রাখতে হবে। এটি অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ হিসেবে গৃহীত হবে।
ফরম্ পূরণের সময় যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে:
- প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো নামের বানান যেন সঠিক থাকে।
- একটি বৈধ মোবাইল নম্বর দিতে হবে।কারন এই প্রকল্প যাবতীয় তথ্য বিষয়ক এস.এম.এস. মোবাইলে মারফত আপনি জানাতে পারবেন ।
- ফর্মটি ফিল আপ করার জন্য অবশ্যই ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেতে হবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বরটি সঠিকভাবে লিখতে হবে।
- রাখতে হবে ফর্মের এক দুই এবং তিন নম্বর পাতায় যেখানে যেখানে হস্তাক্ষরের প্রয়োজন তা যেন কোনভাবেই বাদ না যায়।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করার পদ্ধতি / Kanyashree Scheme Application Status Check
- প্রথমে আপনি কন্যাশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিসিট করতে হবে।
- এরপরে “Track Application” এ ক্লিক করতে হবে।
- এখানে ক্লিক করার পরে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য বিবরণ লিখতে হবে, যেমন – বছর (Year), স্কিমের ধরন (Type of Scheme), আবেদনকারী আইডি (Applicant Id) এবং জন্ম তারিখ (Date of Birth), তারপর “Submit” অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- আবেদন পত্র মঞ্জুর হয়ে গেলে ওই আবেদনকারীর ব্যাংক একাউন্টে অর্থ চলে যায়।
- তবে কন্যাশ্রী প্রকল্পের ফরম ফিলাপ করার আগে অবশ্যই ছাত্রের নিজস্ব একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদনটিকে রিনিউল ও আপডেট করার পদ্ধতি / Kanyashree Scheme Application Renew and Update Procedure
- কন্যাশ্রী প্রকল্পের(Kanyashree Prakalpa) কন্যাশ্রী K1 স্কলারশিপের জন্য আবেদন করলে। তারপর তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক প্রত্যেক বছর তাদের আবেদন পুনর্নবীকরণ করবেন। যতদিন না তারা 18 বছর বয়সে পৌঁছবে।
- এই পুনর্নবীকরণ বা Renewal করার সময় প্রত্যেকটি ছাত্রীকে নিজেদেরকে একটি করে প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে যাতে বোঝা যায় যে তারা অবিবাহিত।
- ছাত্রীদের ১৮ বছর বয়স হয়ে গেলে K1 থেকে কন্যাশ্রী K2 তে আপগ্রেড করা হতে পারে।
- এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত সকল ছাত্রীদের কন্যাশ্রী K2 স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য একটি আবেদন পত্র পূরণ করে জমা দিতে হবে। প্রকল্পটির ফর্ম সম্পূর্ণ সঠিকভাবে পূরণ হয়ে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে ২৫ হাজার টাকা জমা হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আইডি পাওয়ার পদ্ধতি / How to Get Kanyashree Scheme ID
কন্যাশ্রী পোর্টালে আপনার আবেদন জমা হয়ে গেলে , মোবাইল নাম্বারে একটি আইডি নাম্বার আসবে , সেটি হলো তোমার কন্যাশ্রী প্রকল্পের আইডি । এই নম্বর দিয়ে আ্যপ্লিকেশন স্যাটাস চেক করতে পারবেন।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের হেল্পলাইন নম্বর:- 0330-23373846
ইমেইল আইডি:- support.kanyashree@nic.in
কন্যাশ্রী প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
কন্যাশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
কন্যাশ্রী প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করুন | এখানে ক্লিক করুন |
কন্যাশ্রী প্রকল্পের স্ট্যাটাস চেক করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |