Central Government Insurance Scheme: ভারত সরকার দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন বীমা প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে দরিদ্র, প্রান্তিক, কৃষক ও অসংগঠিত খাতের কর্মীরা সাশ্রয়ী মূল্যে জীবন, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা ও পেনশন বীমার সুবিধা পাচ্ছেন।
এই প্রকল্পগুলির মূল উদ্দেশ্য হলো – জীবনযাত্রার ঝুঁকি কমানো, হঠাৎ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লে সহায়তা প্রদান এবং মানুষের মধ্যে সঞ্চয় ও নিরাপত্তার চেতনা গড়ে তোলা। কম খরচে বেশি সুবিধা দিয়ে এই স্কিমগুলো দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করছে।
বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, এই প্রকল্পগুলি জনগণকে ব্যাংকিং ও ডিজিটাল সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে এবং বহু মানুষ আজ এসব সুবিধার আওতায় আসছেন।
কেন্দ্র সরকারের পাঁচটি বীমা প্রকল্প (Central Government Insurance Scheme)
1. প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Jeevan Jyoti Bima Yojana – PMJJBY):
এই প্রকল্পটি বিশেষভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাতে তারা কম খরচে জীবন বীমার সুবিধা পেতে পারেন। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যেকোনো ব্যক্তি যার সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তিনি বছরে মাত্র ৪৩৬ টাকার প্রিমিয়ামে এই প্রকল্পে নাম লেখাতে পারেন। যদি বীমা গ্রহীতা এই সময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তাঁর পরিবার ২ লক্ষ টাকা বীমার অর্থ পায়, যা তাদের আর্থিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
- উদ্দেশ্য: জীবন বীমা প্রদান।
- উপকারভোগী: ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যেকোনো ব্যক্তি যাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে।
- বীমা কভার: মৃত্যুর ক্ষেত্রে ২ লাখ টাকা।
- প্রিমিয়াম: বছরে ৪৩৬ টাকা।
- সময়সীমা: প্রতি বছর নবায়নযোগ্য।
2. প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojana – PMSBY):
এই প্রকল্পটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বা শারীরিক অঙ্গহানির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী যেকোনো ভারতীয় নাগরিক এই স্কিমে যোগ দিতে পারেন। বার্ষিক প্রিমিয়াম মাত্র ২০ টাকা। দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যু হলে ২ লক্ষ টাকা এবং আংশিক অঙ্গহানির ক্ষেত্রে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমার অর্থ প্রদান করা হয়। এটি একটি অতি সুলভ অথচ কার্যকরী দুর্ঘটনা বীমা প্রকল্প।
- উদ্দেশ্য: দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও অঙ্গহানির জন্য বীমা।
- উপকারভোগী: ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তি।
- বীমা কভার: মৃত্যুর ক্ষেত্রে: ২ লাখ টাকা
- আংশিক অঙ্গহানির ক্ষেত্রে: ১ লাখ টাকা
- প্রিমিয়াম: বছরে মাত্র ২০ টাকা।
3. অটল পেনশন যোজনা ( Atal Pension Yojana – APY):
এই প্রকল্পটি মূলত অসংগঠিত খাতের শ্রমজীবী মানুষদের অবসরকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা মাসিক সামান্য অবদান দিয়ে এই স্কিমে যোগ দিতে পারেন। অবদানের পরিমাণ বয়স ও কাঙ্ক্ষিত পেনশনের পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। ৬০ বছর বয়সে পৌঁছালে অংশগ্রহণকারী ১,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক পেনশন পেতে পারেন। এটি বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিম।
- উদ্দেশ্য: অসংগঠিত খাতের কর্মীদের অবসরকালীন পেনশন সুবিধা দেওয়া।
- উপকারভোগী: ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী যেকোনো ব্যক্তি।
- সুবিধা: অবসরের পর মাসিক পেনশন ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা (বয়স ও অবদানের ওপর নির্ভর করে)।
- অবদান: মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা, বয়স অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
4. আয়ুষ্মান ভারত – প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ((Ayushman Bharat – PM Jan Arogya Yojana – PM-JAY):
এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি। ভারতের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের জন্য এটি চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতি পরিবার বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায়। সরকারি ও অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই পরিষেবা পাওয়া যায়। এই প্রকল্পের আওতায় ভর্তি হওয়া, চিকিৎসা, ওষুধ ও পরীক্ষার খরচ সম্পূর্ণরূপে সরকার বহন করে। ফলে দরিদ্র মানুষ চিকিৎসার জন্য আর্থিক সমস্যায় না পড়ে।
- উদ্দেশ্য: গরিব ও দুর্বল পরিবারের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- উপকারভোগী: নির্ধারিত দরিদ্র পরিবার।
- সুবিধা: বছরে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা (সরকারি ও অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতালে)।
- খরচ: উপকারভোগীদের কোনো খরচ নেই।
5. প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana – PMFBY):
এই স্কিমটি কৃষকদের জন্য তৈরি, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, খরা, পোকামাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদির ফলে ফসলের ক্ষতিতে কৃষকরা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত না হন। কৃষকেরা খুবই কম হারে প্রিমিয়াম দিয়ে এই স্কিমে যোগ দিতে পারেন – খরিফ ফসলের জন্য ২% ও রবি ফসলের জন্য ১.৫% প্রিমিয়াম। ক্ষতির ঘটনা ঘটলে সরকার কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়, যাতে তারা পুনরায় চাষে মনোযোগ দিতে পারেন এবং কৃষিতে উৎসাহ বজায় থাকে।
- উদ্দেশ্য: কৃষকদের ফসল ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
- উপকারভোগী: ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক।
- বীমা কভার: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, পোকামাকড় বা অন্যান্য কারণে ফসলের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ।
- প্রিমিয়াম:খরিফ ফসলের জন্য: ২%, রবি ফসলের জন্য: ১.৫%, বাণিজ্যিক/উচ্চমূল্যের ফসল: ৫%