ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মারফত বেশ কিছু স্কলারশিপের স্কিম শুরু হয়েছে। মূলত আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার দিশা দেখাতে রাজ্য সরকারের ঐক্যশ্রী প্রকল্পের(Aikyashree Scheme) উদ্বোধন। মূলত প্রত্যেকটি ক্লাসে অর্থাৎ এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাস থেকে উত্তীর্ণ হয়ে নির্দিষ্ট নম্বর পেলেই এই স্কলারশিপে প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। চলুন তাহলে দেরি না করে আরো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক –
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের বিবরণ / Overview of Aikyashree Scheme
প্রকল্পের নাম | ঐক্যশ্রী প্রকল্প |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রকল্প শুরু করেছেন | মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ২০২০ |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | ২০২৪ এ চালু আছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা |
আবেদনের বয়স সীমা | ৬ বছর বয়স থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত |
কি কি সুবিধা পাবেন | আর্থিক সহায়তা |
আবেদনের স্ট্যাটাস চেক লিঙ্ক | https://wbmdfcscholarship.in/aikya_app/district3.php |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | https://wbmdfcscholarship.in/aikya_app/home_app.php |
ঐক্যশ্রী প্রকল্প কি(What is Aikyashree Scheme) ?
রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রচারিত সামাজিকভাবে দুর্বল এবং পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর এবং তফশিলি জাতি গুলির জন্য একটি বিশেষ স্কলারশিপ এর আয়োজন হল এই ঐক্য শ্রী প্রকল্প। এই প্রকল্প মারার পথ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য করাই হলো মূল লক্ষ্য।
চলতি শিক্ষাবর্ষে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছেন বা স্কুল শেষ করে কলেজে বা তারও বেশি কোন শিক্ষাগত যোগ্যতায় পড়াশোনা করছেন তাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের অর্থ নিগম এবং সংখ্যালঘু বিভাগ কর্তৃক এই স্কলারশিপের প্রদান করা হয়ে থাকে। তো কিভাবে স্কলারশিপের আবেদন করবেন বা এস স্কলার্শিপে কত টাকা অব্দি আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে তা আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো বলে রাখা ভালো, এই স্কলারশিপের মারফত শিক্ষার্থীরা পিএইচডি স্তর পর্যন্ত সরকার কতৃক আর্থিক সাহায্য পাবেন। আর ক্লাস ভিত্তিকে বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে এই স্কলারশিপকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ এবং পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ।
স্কলারশিপ এর আওতায় পড়ছেন যারা বর্তমানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর মধ্যে পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা রয়েছেন। অন্যদিকে পোস্ট ম্যাট্রিক্স স্কলারশিপ এর আওতায় দশম পরবর্তী অর্থাৎ একাদশ দ্বাদশ শ্রেণী থেকে phd পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা রয়েছেন।
আবার নাম্বারের ভিত্তিতেও স্কলারশিপের ভাগ করানো হয়েছে অর্থাৎ সংখ্যালঘু প্রার্থীরা যদি 50 শতাংশের উপরে নাম্বার পান সেক্ষেত্রে তারা ঐক্য স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন তবে তারা যদি ষাট শতাংশ বা তার উপরে পান সেক্ষেত্রে তারা ঐক্য শ্রী স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ পাবেন।
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের সুবিধা / Benefits of Aikyashree Scheme
এইচ স্কলারশিপ এর মূল সুবিধাটি হল সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বার্ষিক ভিত্তিতে কিছু অর্থের সাহায্য পাবেন। কোন ক্লাসের জন্য কত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তা আমরা নিচে আলোচনা করছি।
- প্রাক ম্যাট্রিক প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী প্রার্থীদের জন্য মোট বৃত্তির পরিমাণ ১১০০ টাকা
- প্রাক ম্যাট্রিক ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জন্য মোট বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ পাঁচ হাজার পাঁচশ টাকা।
- পোস্ট ম্যাট্রিক একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য বৃত্তির পরিমাণ ১০ হাজার দুশো টাকা
- পোস্ট ম্যাট্রিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর জন্য বৃত্তির পরিমান ৬৬০০ টাকা
- পোস্টমেট্রিক এমফিল এবং পিএইচডির জন্য জন্য বৃত্তির পরিমাণ ৯৩০০ টাকা
- পোস্ট ম্যাট্রিক মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাকাউন্টেন্ট ল ইত্যাদির মোট জন্য বৃত্তির পরিমাণ ২৭৫০০ টাকা
যারা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন তারা কত টাকা করে বৃত্তি পাবেন ?
- প্রাক ম্যাট্রিক ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত বৃত্তির পরিমাণ ১১ হাজার টাকা
- পোস্ট ম্যাট্রিক একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির জন্য বৃত্তির পরিমাণ ১১ হাজার ৯০০ টাকা
- পোস্ট ম্যাট্রিক স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরের জন্য বৃত্তির পরিমাণ ৯ হাজার ৩০০ টাকা।
- পোস্ট ম্যাট্রিক এমফিল এবং পিএইচডি এর জন্য বৃত্তির পরিমাণ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা
- ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিং একাউন্টেন্ট ল ইত্যাদি নিয়ে পাঠরতদের জন্য বৃত্তির পরিমাণ ৩৩ হাজার টাকা।
ঐক্যশ্রী প্রকল্পে কারা এ আবেদন করতে পারবেন(Who can apply for Aikyashree Scheme) ?
এই স্কলারশিপ স্কিমে কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভুক্ত মানুষেরা অর্থাৎ মুসলিম জৈন খৃষ্টান শিখ আবেদন করতে পারবেন।
- স্কলারশিপে কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত প্রার্থীরাই আবেদন করতে পারবেন।
- ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যূনতম পঞ্চাশ শতাংশ নাম্বার রাখতে হবে।
- অবশ্যই প্রার্থীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- প্রার্থী পারিবারিক বার্ষিক আয় সমস্ত উৎস থেকে কোনভাবেই 2 লক্ষের উপরে হওয়া যাবে না।
- তফসিলী জাতি উপজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য এই স্কলারশিপ উপলব্ধ রয়েছে।
কারা কারা এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবেনা? - সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যাতীত অন্য কোন জাতের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না।
- প্রার্থীর প্রাপ্ত নাম্বার ষাট শতাংশের উপরে হলে স্কলারশিপে আবেদনের জন্য যোগ্য নয়।
- বার্ষিক আয় কোনভাবেই 2 লক্ষে টাকার উপরে হলে তারা আবেদন করতে পারবেন না।
ঐক্যশ্রী প্রকল্পে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস/ Documents required to apply forAikyashree Scheme
- প্রার্থী নিজস্ব জাতীয়তা পত্র হিসাবে আধার বা ভোটার কার্ড
- প্রার্থী নিজস্ব ব্যাংকের পাসবুকের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি
- রেজিস্টার্ট মোবাইল নম্বর
- প্রার্থীর বিগত বছরের মার্কশিট এর প্রমাণ
- সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির রশিদ
- অনলাইনে আবেদন করার পর প্রার্থীদের উল্লেখিত ডকুমেন্টস গুলি তাদের সংশ্লিষ্ট স্কুলে আবেদন পত্রের এক কপি প্রিন্ট আউট এর সঙ্গে জমা করবেন।
ঐক্যশ্রী প্রকল্পটিতে আবেদন করার পদ্ধতি/ How to apply in Aikyashree Scheme
- স্কলারশিপে আবেদনের জন্য আপনাকে প্রথমে অনলাইনে অফিশিয়াল পোর্টাল প্রবেশ করতে হবে।
- এরপর স্টুডেন্টস সেকশন অপশনে গিয়ে আপনাকে ক্লিক করতে হবে।
- এই অপশনে ক্লিক করলে ঐক্যশ্রী এর প্যানেলে নিউ রেজিস্ট্রেশন এর অপশন উঠে আসবে।
- ফ্রেশ রেজিস্ট্রেশনের অপশন এ ক্লিক করলেই আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেক্ট করতে বলা হবে এবং কোন জেলায় আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত তা সিলেক্ট করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামটি সিলেক্ট করবেন।
- আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিলেট করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার সামনে আমার একটি রেজিস্ট্রেশন ফর্ম উঠে আসবে। এখানে আপনাকে পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করতে হবে। এই ফর্মে যে ভাগ গুলি আছে তা হল student information, scheme eligibility, successful registration, documents upload, final submission।
- প্রথমে আপনাকে স্টুডেন্টের যাবতীয় তথ্য যা ও স্টুডেন্টের নাম তারা গার্জিয়ানের নাম সংশ্লিষ্ট জেলার নাম জন্ম তারিখ ধর্ম মোবাইল নাম্বার ব্যাংক একাউন্ট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে স্টুডেন্ট ইনফরমেশন পদ্ধতি পূরণ করতে হবে।
- এরপর সংশ্লিষ্ট কোন স্কুলে পড়ছে সে স্কুলের নাম কোন বছরে পাস আউট হয়েছে বিগত বছরের নাম্বার এবং এডমিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য স্কিল এলিজিবিলিটি আপলোড করতে হবে।
- এরপর আপনাকে উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসগুলি আপলোড করতে হবে ঠিকই ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে ইতিমধ্যেই আগে বলে দেয়া হয়েছে সেগুলি অবশ্যই হাতের কাছে রেখে আবেদন করতে বসবেন।
- এরপরে ফাইনাল সাবমিশন অর্থাৎ ফরমটি পুনরায় আবার চেক করে নেবেন কোথাও কোনো রকম তথ্য ভুল রয়েছে কিনা, সম্পূর্ণ আবেদন চেকের পর ফাইনাল সাবমিট অপশন এ ক্লিক করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবেন।
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করার পদ্ধতি / Aikyashree Scheme Application Status Check
- স্ট্যাটাস চেক করতে হলে আপনাকে পুনরায় অফিশিয়াল পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে এবং প্যানেল অপশনে গিয়ে ট্র্যাক এপ্লিকেশন অপশন এ ক্লিক করতে হবে।
- এরপর আপনার সামনে অপশনটি খুলে গেলে আপনি আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর জন্মের তারিখ এবং সংশ্লিষ্ট জেলার নাম সিলেক্ট করে সাবমিট করলেই আপনার সামনে আপনার বর্তমান এপ্লিকেশনের স্ট্যাটাস খুলে যাবে।
- এই স্ট্যাটাস অপশনে আপনি আপনার অ্যাপ্লিকেশন ভেরিফাই হয়েছে কিনা বা সেটি এপ্রুভ হয়েছে কিনা সেই আপডেট পেয়ে যাবেন
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করুন | এখানে ক্লিক করুন |
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশন করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |
ঐক্যশ্রী প্রকল্পের স্ট্যাটাস চেক করার লিঙ্ক | এখানে ক্লিক করুন |