পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর যেকোন রকম সুবিধা-অসুবিধায় পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। তাই তার আদেশে রাজ্য সরকার বিভিন্ন রকম প্রকল্পের আয়োজন করে থাকে, সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার উদ্দেশ্যে। এই বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যেই ২০১৬ সালে, অন্য সমস্ত উপকারী প্রকল্পের মতনই প্রথমবার পথসাথী প্রকল্পের(Patha Sathi) সূচনা হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন, মূলত রাজ্যের জাতীয় ও রাজ্য সড়কে ভ্রমণরত যাত্রীদের জন্য আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণের লক্ষ্যে।রাজ্য সরকারের এই বিভিন্ন রকম প্রকল্প সম্পর্কে আগেও আমরা বিশদে জেনেছি। তাই আজকেও এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা রাজ্য সরকারের সম্প্রতি অন্যতম জনপ্রিয় অভিনব এক প্রকল্প__ পথসাথী প্রকল্প(Pathasathi Prakalpa) সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
পথসাথী প্রকল্প/ Overview of Pathasathi Scheme
প্রকল্পের নাম | পথসাথী প্রকল্প |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রকল্প শুরু করেছেন | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | পরিবহন ও পর্যটন দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে। |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | সক্রিয় এবং বর্তমানে চালু রয়েছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | স্থানীয় উদ্যোক্তা বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী যারা রেস্ট হাউস বা বিশ্রাম কেন্দ্র পরিচালনায় আগ্রহী |
আবেদনের বয়স সীমা | নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই; যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আবেদন করা যায় |
কি কি সুবিধা পাবেন | জাতীয় ও রাজ্য সড়কে যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম কেন্দ্র,পর্যটকদের জন্য খাবার, শৌচাগার, বিশ্রামের সুবিধা,স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি,নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রার অভিজ্ঞতা |
আবেদনের স্ট্যাটাস চেক লিঙ্ক | https://wb.gov.in |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | https://wb.gov.in |
পথসাথী প্রকল্প আসলে কি ?
What is the Pathasathi Scheme?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আনন্দধারা প্রকল্পের অধীনে যাত্রীদের আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পথসাথী প্রকল্প(Pathasathi Prakalpa) চালু করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলিতে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় দীর্ঘ সড়কযাত্রায় যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, স্যানিটেশন ও খাদ্যসেবার অভাব ছিল। বিশেষত মহিলাদের জন্য নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের অভাব একটি বড় সমস্যা ছিল। এই চাহিদাকে মাথায় রেখে সরকার পথসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কপথে যাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশ্রামাগার স্থাপন করেছে।
পথসাথী প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য:
Key features of the Pathasathi Scheme:
- এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রাজ্যে যাত্রীদের নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও আরামদায়ক যাত্রার প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
- এই প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলিতে প্রতি ৫০ কিলোমিটার অন্তর যাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশ্রামাগার নির্মাণ করেছে।
- বিভিন্ন জায়গায় Travel করার সময় বিভিন্ন রকম সমস্যার বিশেষত মহিলাদের শৌচালয় সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় , এইসব সমস্যা থেকেই যাত্রীদের মুক্ত করতে এবং রাতে বিশ্রামের সুবিধা দিতে এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যে তৈরি করা হয়েছে পে-অ্যান্ড-ইউজ শৌচাগার এবং যাত্রীদের জন্য অপেক্ষাকক্ষ/Wating-Room ।
- এই প্রকল্পের অধীনে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত বিশ্রামাগারগুলিতে শৌচালয় এবং ওয়েটিং রুমের সুবিধার পাশাপাশি থাকে খাদ্যসেবা অর্থাৎ রেস্টুরেন্টের সুবিধাও।
- এই প্রকল্পের অধীনে নির্মিত কিছু কিছু প্রতীক্ষালয়ে Air Conditioning এরও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
কোন কোন অঞ্চলে এই পথসাথী বিশ্রামাগারের সুবিধা পাওয়া যায় ?
In which regions are these Pathasathi rest rooms available?
নদিয়া জেলায় ইতিমধ্যেই পাঁচটি পথসাথী বিশ্রামাগার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সেগুলি খুব শীঘ্রই চালু করার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এখন পর্যন্ত মোট ৩১টি পথসাথী বিশ্রামাগার তৈরি হয়ে গেছে।
বর্ধমানের শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি পথসাথী চালু হয়েছে, যেখানে ক্লান্ত যাত্রীদের জন্য এসি ঘরসহ বিশ্রামের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সেখানে সুস্বাদু খাবারের ভালো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক মানুষ স্বনির্ভর হচ্ছেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ যাত্রীদের জন্য যেমন উপকারি, তেমনি সমাজের আর্থিক উন্নয়নেও সহায়ক।
পথসাথী প্রকল্পের গুরুত্ব ও উপকারিতা :
Importance and benefits of the Pathasathi Scheme:
- দীর্ঘ যাত্রায় বিশ্রামের সুবিধা- যাত্রীদের জন্য রাস্তার ধারে বিশ্রামের ব্যবস্থা, যা যাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে।
- পরিচ্ছন্ন শৌচাগার ও স্যানিটেশন সুবিধা- বিশেষ করে মহিলাদের জন্য নিরাপদ ও পরিষ্কার টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা- যাত্রীদের জন্য ভালো মানের খাবার ও জল পাওয়ার সুযোগ থাকে।
- রাত্রি যাপনের সুযোগ- দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য থাকার সুবিধা থাকে, যা নিরাপদ ভ্রমণে সহায়তা করে।
- পর্যটন উন্নয়নে সহায়ক- পর্যটকদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকায় রাজ্যের পর্যটন আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
- স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি- এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কিছু স্থানীয় মানুষজন কাজের সুযোগ পাচ্ছে।
- স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও সংস্থার উন্নয়ন- অনেক অঞ্চলের পথসাথী, স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়।
- ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা- পরবর্তীকালে এই স্থানগুলো ছোট ব্যবসা হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে।
- ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা- দীর্ঘ রাস্তা জুড়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যায়।
- সরকারি উদ্যোগের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই প্রকল্পের সাহায্যে রাজ্যের বিভিন্ন মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে ফলে সাধারণ মানুষের সরকারের ওপর আস্থা আরও বৃদ্ধি পায়। পথসাথী বিশ্রামাগার ব্যবহার করার পদ্ধতি:
How to use the Pathsathi Restroom: - বিনামূল্যে প্রবেশ- সাধারণ যাত্রীরা কোনো প্রবেশমূল্য ছাড়াই ‘পথসাথী’ চত্বরে ঢুকতে পারেন এবং বসে বিশ্রাম নিতে পারেন।
- টয়লেট ব্যবহারে ‘পে-অ্যান্ড-ইউজ’ পদ্ধতি- শৌচাগার ব্যবহারের জন্য সাধারণত একটি সামান্য নির্ধারিত মূল্য দিতে হয়।
- খাবার ও পানীয় ক্রয়- খাবার বা চা-কফি খেতে চাইলে ক্যাফেটেরিয়া বা Food Code থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া যায়।
- রাত কাটানোর ব্যবস্থা- যারা রাতে যাত্রা থামিয়ে বিশ্রাম নিতে চান, তারা ‘রেস্ট রুম’ বা ঘর ভাড়া নিতে পারেন নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে।
- নিরাপত্তা ও নিয়ম মেনে চলা- ব্যবহারকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্রাম নিতে হবে এবং সরকারি নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে।
- স্থানীয় কর্মীদের সহায়তা নেওয়া- কোনো অসুবিধা হলে ‘পথসাথী’ পরিচালনাকারী কর্মীদের সাহায্য নেওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস/Important Tips :
1.পথসাথী চিহ্ন খেয়াল করুন- রাস্তা চলার সময় ‘Pathasathi’ বোর্ড বা চিহ্ন দেখে বিশ্রামাগার চেনা যায়।
2.জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করুন- দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত হলে বা শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিশ্রামের প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করুন।
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন- শৌচাগার বা খাওয়ার জায়গা ব্যবহারে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন।
- স্থানীয় হেল্পডেস্ক থেকে তথ্য নিন- কোথায় কোন সুবিধা রয়েছে তা জানতে স্থানীয় কর্মীদের জিজ্ঞাসা করুন।
- অযথা ভিড় বা বিশৃঙ্খলা করবেন না- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অন্য যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে আচরণ করুন।
- নিরাপত্তা বজায় রাখুন- আপনার জিনিসপত্র নিজের কাছে রাখুন ও সন্দেহজনক কিছু দেখলে কর্মীদের জানান।
- অফিশিয়াল ওয়েবসাইট- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন দপ্তরের/Transport Department, Govt. of West Bengal অধীনে এই পথসাথী প্রকল্পটি সম্পর্কিত আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনারা ভিজিট করতে পারেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট_
https://transport.wb.gov.in
উপসংহার :
পথসাথী প্রকল্প(Pathasathi Prakalpa) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি জনকল্যাণমুখী, দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। রাজ্যের জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলিতে যাত্রীদের জন্য নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। ক্লান্ত যাত্রী, মহিলা, শিশু কিংবা বয়স্ক যাত্রী— সকলেই এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন।
এই প্রকল্প শুধু বিশ্রামের জায়গা নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ যাত্রীসেবাকেন্দ্র, যেখানে রয়েছে শৌচাগার, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা, রাত্রিযাপন, বিশ্রামের ঘর এবং জরুরি সেবা।এছাড়াও, পথসাথী প্রকল্প স্থানীয় মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথ খুলে দিয়েছে। পর্যটনের বিকাশ, ট্রাফিক নিরাপত্তা ও সমাজকল্যাণ—সব দিক থেকেই এই প্রকল্পের অবদান অনস্বীকার্য।
বর্তমান যুগে যাত্রার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত, নিরাপদ ও মানুষের উপযোগী করে তুলতে এ ধরনের প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই প্রকল্প রাজ্যের আরও বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ুক এবং আরও যাত্রী এর সুফল পান—এই কামনা রাখি। পথসাথী প্রকল্প নিঃসন্দেহে “সকলের জন্য সম্মানজনক যাত্রা” নিশ্চিত করার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
পথসাথী প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক :–
পথসাথী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |