জল ধরো, জল ভরো প্রকল্প : পশ্চিমবঙ্গ বাসীদের জল সংকট থেকে মুক্তি দিতে রাজ্য সরকারের এক অভিনব প্রকল্প

Oindrila Chatterjee
Jal dharo Jal bharo Scheme
WhatsApp Channel Follow Now

Jal dharo Jal bharo Scheme: এককালে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজ্যের চাষীরা চাষের কাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরিমাপ ছাড়াই সীমাহীনভাবে চাষীরা(Farmers) মাটির তলা থেকে জল তুলে নিত। কি জল তোলা প্রক্রিয়াটি তারা মার্সিবাল পাম্প চালিয়ে সম্পন্ন করতো। আর এই সীমাহীনভাবে জল তুলে নেওয়ার কারণেই দক্ষিণবঙ্গের অসংখ্য জেলায় মাটির নিচের জলস্তর ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।

রাজ্যের বেশ কিছু জেলা অত্যধিক পরিমাণে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। যেমন নদিয়া , মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া , বাঁকুড়া , পূর্ব বর্ধমান পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম এই জেলাগুলিতে সর্বাধিক জলস্তর হ্রাস পায়।

এই গুরুতর সমস্যার সমাধান করতেই “জল ধরো, জল ভরো” (Jol dhoro jol bhoro ) নামে এক অভিনব প্রকল্প (Scheme ) চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) সর্বপ্রথম এই প্রকল্প চালু করেছিলেন ২০১১-১২ অর্থবর্ষে। কারণ বহু সমীক্ষায় উঠে এসেছিল রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে ঝড়ের গতিতে মাটির জলের স্তর (Water Line) নামতে শুরু করেছে ।

তখন এই সমস্ত ব্লকগুলিকে সরকারি ভাষায় ক্রিটিক্যাল(Critical) নামে ঘোষণা করা হয়েছিল । বর্তমান সমীক্ষার(Servey) দ্বারা দেখা যায় ১০ বছর আগের এই গুরুতর সমস্যা এখনো অনেকটাই সমাধানের পথে এই জল ধরো জল ভরো প্রকল্পের(Scheme ) মাধ্যমে ঐ সমস্ত জেলার মাটির নিচের জলের স্তর অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই প্রকল্পের পূর্বে রাজ্যের কোন কোন জেলাকে জলস্তর নিচে নেমে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ?| Before this project, which district of the state had to face serious problems like water level going down?

আজ থেকে ১০ বছর আগে এই জল ধরো জল ভরো প্রকল্প শুরুর পূর্বে বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সূত্রে জানা গিয়েছিল প্রায় ৯ টি ক্রিটিক্যাল ব্লক(Critical Block) যেগুলি বীরভূম জেলায় অবস্থিত ছিল তাদের মাটির নিচের জলস্তর সর্বনিম্ন হয়ে গিয়েছিল।

সম্প্রতি এর এই নয়টি ক্রিটিক্যাল ব্লকের মধ্যে ময়ূরেশ্বর -২ নামক মাত্র একটি ব্লক সেমি ক্রিটিকাল অবস্থায় আছে , এছাড়া জেলায় বাকি ক্রিটিক্যাল ব্লকের(Critical Block) সংখ্যা এখন একটাও নেই । মুর্শিদাবাদ জেলাতেও একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সম্প্রতি এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই জেলাও সমস্যার সমাধানের পথে সেরকম কোন ক্রিটিক্যাল ব্লক নেই একটিমাত্র সেমি ক্রিটিক্যাল ব্লক রয়ে গেছে সেটি হল রানীনগর – ১।

এছাড়াও রাজ্যের কিছু কিছু জেলায় কয়েকটি সেমি ক্রিটিক্যাল ব্লক এখনো রয়ে গেছে যেমন হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ- জিয়াগঞ্জ , ভবনগোলা ১ , বহরমপুর, বেলডাঙ্গা-১ এবং নওদা ব্লক, কালনা -২ , বর্ধমান -২ , মঙ্গল কোট, মেমাটি-১, এবং পূর্বস্থলী-২ , এছাড়াও রাতে আরো অনেক ক্রিটিক্যাল ব্লক বর্তমানে সেমি ক্রিটিক্যাল ব্লক এ পরিণত হয়েছে যেমন রানাঘাট, নকশীপাড়া, করিমপুর , শান্তিপুর, কৃষ্ণগঞ্জ, নবদ্বীপ ইত্যাদি।

অন্যদিকে আবার পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর ও কেশপুর ক্রিটিক্যাল ব্লক থেকে সেমি ক্রিটিক্যাল এ চলে এসেছে। তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলোর সংখ্যা ও খুব শীঘ্রই শূন্য হতে চলেছে।

জল ধরো জল ভরো প্রকল্প কতটা সাফল্যের পথে এগোচ্ছে! | Jal Dharo Jal Bhoro Scheme is moving towards success!

পশ্চিমবঙ্গের জল সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের (Department of Water Resources Development) সমীক্ষা অনুসারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের উদ্যোগের কারণে জলস্তর ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার যে সমস্যা তা এখন অনেকটাই সমাধানের পথে। এই প্রকল্পের কারণে মাটির নিচের জলস্তর গুলো ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই জল ধরো জল ভর প্রকল্প (Jal dharo Jal bharo Scheme) ক্রমশ সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালের ধান চাষের সময় যেই সাবমার্সিবল পাম্প ব্যবহার করে জল তোলা হতো তা ব্যাহত রেখে নদী থেকে জল তুলে তার সরবরাহ করার ব্যবস্থা চালু করা হয়। এতে মাটির নিচে জলস্তর কমেও যায় না এবং আর্সেনিকের পরিমাণ ক্রমশ কম হয়। তাই মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলায় একসময় আর্সেনিক কবলিত এলাকার সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছিল কিন্তু এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেই এলাকার সংখ্যক ক্রমশ কমতে চলেছে।

জল ধরো জল ভরো প্রকল্পের কাজের ধরন : Mode of works of Jal dharo Jal bharo Scheme

এই প্রকল্পের প্রথম কাজ শুরু হয় বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন জলধার অথবা পুকুরের উপরে। বর্তমানে অধিকাংশ জলাশয় অবহেলিত অবস্থায় দেখা যায় কিন্তু একসময় রাজ্যে সেই জলাশয় গুলোতে ভালো পরিমাণ জল ছিল । কারণ অনেক জলাশয় শুকিয়ে গেছে আবার অনেক জলাশয় বালি এবং কচুরি পানাতে ঢেকে গেছে ।

জল ধরো, জল ভরো প্রকল্পের(Scheme) অধীনে সর্বপ্রথম কার্য হল বিভিন্ন অবহেলিত জলাশয় গুলো সংস্কার করা এবং আরো অনেক নতুন জলাশয় খনন করা। এছাড়াও এই প্রকল্পের(Scheme ) অধীনে বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির উঠোনে ছোট ছোট জলাধার তৈরি করা হচ্ছে তাতে বৃষ্টির সময় সেখানে জল সঞ্চিত হয়ে থাকে এবং অন্যান্য অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে চাষের জমিতে যাতে কম পরিমাণ জল ব্যবহার করেও জমি চাষযোগ্য থাকতে পারে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাটির নিচের জলস্তর বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও কি কি উপকারিতা আছে! Apart from increasing the underground water level through this Jal dharo Jal bharo Scheme, what are the other benefits!

১. বেশি পরিমাণে জল সঞ্চয়: এই প্রকল্পটি সবথেকে বড় উপকারিতা হলো বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে রাখা। যেমন শুষ্ক মরশুমে কৃষিকাজে ব্যবহার করার জন্য এই সঞ্চিত জল কাজে লাগে, আবার জল সজ্জিত থাকলে তা বিশুদ্ধিকরণ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় ।

২. বন্যা নিয়ন্ত্রণ : বিভিন্ন জলধারাগুলোর সংস্কার এবং নতুন জলাশয় খনন এর মাধ্যমে বন্যার ক্ষতি অনেক পরিমানে কমানো সম্ভব হয়ে থাকে । অনেক সময় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সেই জল নদীতে গিয়ে সরাসরি পড়লে নদীতে এক বন্যার হতে পারে। কিন্তু যদি জলধারার মধ্যে সেই বৃষ্টির জল সঞ্চিত থাকে এবং তার ধীরে ধীরে মাটিতে প্রবাহিত হতে পারে, যার ফলে মাটির নিচের জলস্তর বৃদ্ধি পায় এবং বন্যা হওয়ার আশঙ্কা কম হয়।

৩. কৃষিকাজে সহায়তা : এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে জল না তুলে সঞ্চিত জল অথবা নদী থেকে সরাসরি জল কৃষি কাজের জমিতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এর ফলে সেচের জমির উন্নতি হয় এবং কৃষকরা অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারে এই যথাযথ জল সরবরাহের কারণে কৃষি কাজের খরচও কম হয় উৎপাদনও অনেক বেশি হয়।

উপসংহার (Conclusion)

এই জল ধরো , জল ভরো প্রকল্পটি আমাদের জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে আমরা শিখেছি কিভাবে আমাদের মূল্যবান জলসম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং তা অপচয় করা চলবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের রাজ্যের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে যে জনসংকট আসতে চলেছিল তা থেকে আমরা সমাধানের পথে। এই প্রকল্পটি আমাদের রাজ্যকে একটি জনসম্পদের সমৃদ্ধ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Channel Follow Now
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *