Yogyashree Scheme: আর্থিক অস্বচ্ছলতাই আর হবে না শেষ কথা! উন্নত ভবিষ্যতের জন্য করতে হবে না দুশ্চিন্তা! অর্থের জোর নেই বলে, পিছিয়ে থাকবে না কোনো ছাত্রছাত্রীর উচ্চশিক্ষা। মেধাবী পড়ুয়াদের সুস্থ আগামীর কথা ভেবেই এবার রাজ্য সরকার চালু করেছে যোগশ্রী প্রকল্প। গত বছর এই প্রকল্পের শুভ সূচনা করেন খোদ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
যোগশ্রী প্রকল্প(Yogyashree Scheme) কী?
বরাবরই রাজ্যের মানুষের সুবিধার কথা ভেবে সরকার থেকে চালু করা হয়েছে একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলিতে যেমন সমাজের তথাকথিত আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির নারীরা সুবিধা পান, তেমনই সুবিধা পায় মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কর্মশ্রী, গতিধারা ইত্যাদির সঙ্গে এবার এই তালিকায় যোগ দিল যোগশ্রী প্রকল্প।
যোগশ্রী প্রকল্পের(Yogyashree Scheme) উদ্দেশ্য:
অনেক সময়েই দেখা গেছে, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়ার কারণে, সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছাত্রছাত্রীরা উন্নত শিক্ষালাভ করা থেকে বঞ্চিত থাকে। মেধার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও, বাধা হয়ে দাঁড়ায় পারিবারিক দারিদ্র্য। তাঁদের কথা ভেবেই রাজ্য সরকার বিভিন্ন সময় নানা ধরনের নতুন নতুন প্রকল্পের প্রচলন করে থাকেন। সে কারণেই যোগশ্রী প্রকল্পের প্রচলন করা হয়েছে।
এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই প্রকল্পের সুবিধা যেমন পাবে সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি ও উপজাতির দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষাথীরা, তেমনই বঞ্চিত হবে না সাধারণ, অর্থাৎ জেনারেল গোষ্ঠীর পড়ুয়ারাও। ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল কোর্স-জাতীয় উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার জন্য এই প্রকল্প অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যে সকল মেধাবী শিক্ষার্থীরা দারিদ্রতার কারণে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না, তাঁদের কথা ভেবে, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে সমগ্র রাজ্য জুড়ে। সরকারী চাকরীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৪৬ টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রায় দুই হাজারের বেশি পড়ুয়া পারবে এই কেন্দ্রগুলি থেকে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিতে। একাদশ শ্রেণী থেকেই শুরু হবে প্রশিক্ষণ পর্ব, যাতে পড়ুয়াদের ভিত একেবারে গোড়া থেকেই মজবুত ও প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
যোগশ্রী’ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কি চিন্তাভাবনা:
গত বছরের শুরুর দিকেই, ধন ধান্য অডিটোরিয়ামে (Dhono Dhanyo Auditorium) এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পটি পরিচালনার দায়িত্বের ভার তিনি অর্পণ করেন পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ বিভাগকে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাস, এই বাংলা থেকেই বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। তাঁর আফসোস, এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়েরা আর্থিক দুরবস্থার জন্য উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারে না।
এছাড়াও সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলির প্রস্তুতির জন্য যে সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রাজ্য জুড়ে রয়েছে, তার বেশীরভাগই বেশ খরচ-সাপেক্ষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ বা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে সেই খরচ বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেই কারণে এই সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে যাতে বাংলার সকল ছেলে মেয়ে তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারে, তার জন্য যোগশ্রীর মত প্রকল্পের সূচনা করেছেন তিনি।
যোগশ্রী প্রকল্পের(Yogyashree Scheme) সুবিধা:
- এই প্রকল্পে শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে যেমন জয়েন্ট এন্ট্রান্স (Joint Entrance) বা নিটের (NEET) জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।
- এছাড়াও ব্যাংক, রেল, সামরিক, আধাসামরিক, পুলিশসহ নানা ধরনের সরকারী বা বেসরকারী চাকরির প্রশিক্ষণও নেওয়া যাবে এই প্রকল্পের দ্বারা।
এখানেই শেষ নয়, রয়েছে আরও একটি চমক। - প্রশিক্ষণ চলাকালীন ছাত্র ছাত্রীরা প্রতি মাসে পাবে প্রায় তিনশো টাকা মত স্টাইপেন্ড।
যোগশ্রী প্রকল্পে (Yogyashree Scheme) কারা করতে পারবেন আবেদন?
বলা বাহুল্য, যোগশ্রী প্রকল্পের প্রচলনের ফলে বেশ ভালই উন্নতিলাভ করেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। তবে মনে রাখতে হবে, সকলেই এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবে না। তার জন্য থাকতে হবে সুবিধাভোগীদের কিছু ন্যূনতম যোগ্যতা।
- এই প্রকল্পে আবেদনকারীকে মাধ্যমিকে অন্তত ৫০% থেকে ৬০ নম্বরের অধিকারী হতে হবে।
- এতদিন এই জাতীয় প্রকল্প সংখ্যালঘু শ্রেণীর জন্যই বরাদ্দ ছিল, কিন্তু আশার খবর এটাই যে, সমাজের সকল গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীই এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারে।
- এই প্রকল্পে আবেদন করতে গেলে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে চাই, এই রাজ্যেরই নাগরিকত্ব। ভিনরাজ্য থেকে এসে এই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে না।
যোগশ্রী প্রকল্পে (Yogyashree Scheme) আবেদনের জন্য গুরুত্বপুর্ন নথি
এই প্রকল্পে আবেদন করতে গেলে বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ন নথিরও দরকার হয়। সেই প্রয়োজনীয় নথিগুলি হল –
- আবেদনকারীর আধার কার্ড
- আবেদনকারীর প্যান কার্ড
- আবেদনকারীর বাসস্থানের শংসাপত্র
- আবেদনকারীর পারিবারিক আয়ের দলিল
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- আবেদনকারীর ফোন নম্বর
যোগশ্রী প্রকল্পে(Yogyashree Scheme) আবেদনের লিংক
www.anagrasarkalyan.gov.in ও www.wbbcdev.gov.in – এই দুই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই করা যেতে পারে যোগশ্রী প্রকল্পে আবেদন।
- প্রথমে এই ওয়েবসাইটগুলির যে কোনো একটি থেকে আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করে ফিলাপ করতে হবে।
- তারপর সেই ভরাট করা ফর্ম নিয়ে যেতে হবে আপনার বাড়ির নিকটবর্তী সেন্টারে।
- সেখানেই এই ফর্ম জমা করতে হবে। উল্লেখ্য, ওয়েবসাইটেই লেখা থাকবে নির্দিষ্ট সেন্টারের নাম।
এই প্রকল্প অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ছয় মাসের, মোট ৩০০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন করে, মোট চার ঘণ্টা ক্লাস করার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা। থাকবে প্রয়োজনীয় স্টাডি মেটেরিয়াল এবং প্রতি সপ্তাহে মক টেস্টের সুব্যবস্থা। এর ফলে ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের সঠিক মূল্যায়ন করতে বিশেষভাবে উদ্যত হবে। থাকবে সংশোধনী ক্লাসও। যেখানে নিজেদের ভুল সংশোধন করে আরও উন্নতির দিকে প্রতিটি পড়ুয়া অগ্রসর হতে পারে।
আশা করা যায়, এইভাবেই বাংলার প্রতিটি ঘরের ছেলে মেয়ে যেমন ছুঁতে পারবে তাঁদের স্বপ্নকে, তেমনই দূরীভূত করতে পারবে সমাজ থেকে দরিদ্রতা।
যোগশ্রী প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক :–
যোগশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |
যোগশ্রী প্রকল্পের আবেদন পত্র ডাউনলোড লিঙ্ক | Click Here |