একটা সময় ছিল যখন মানুষ কেবলমাত্র আয় আর ব্যয়ের দিকেই খেয়াল রাখতেন। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব কম মানুষই তখন ভাবতেন। তবে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। আয় আর ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ধরনের বীমায় বিনিয়োগ করা শুরু করেছেন। তবে অনেকেই সঠিক বীমা খুঁজে পান না। তারা বুঝে উঠতে পারেন না কোথায় বিনিয়োগ করা ঠিক হবে। আজ তেমনই একটি বিনিয়োগের সম্পর্কে আপনাদের জানাতে এসেছি।
আজকের প্রতিবেদনে আমরা কথা বলব প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-র সম্পর্কে। এটি একটি সরকারি বীমা প্রকল্প। অবিশ্বাস্যভাবে কম বার্ষিক কিস্তিতে মাত্র 20 টাকায় অ্যাক্সিডেন্টাল ইন্সুরেন্স প্রদান করে থাকে এই যোজনা। মাত্র 18 বছর বয়স থেকেই এই বীমা প্রকল্পে বিনিয়োগ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna) কী?
এটি বেশ সাশ্রয় একটি বীমা প্রকল্প। অর্থনৈতিকভাবে যাঁরা দুর্বল, তাঁরা কিন্তু নিশ্চিন্তে এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর সরকারি বীমা হওয়ার কারণে ঠকে যাওয়ারও ভয় নেই। বছরে মাত্র খরচ হবে 20 টাকা।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-র সুবিধা :-
- এই বীমা যোজনা হোল্ডারের মৃত্যু হলে তাঁর নমিনি টাকা পাবেন।
- আপনাকে কাউকে হাতে হাতে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ব্যাংক একাউন্ট থেকে সরাসরি কিস্তি কেটে নেওয়ার অসুবিধা রয়েছে এই যোজনায়।
- আপনি চাইলে প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-তে দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার প্রতি বছর রিনিউ করারও সুবিধে রয়েছে।
- এতে কিন্তু কর সঞ্চয়ের সুবিধা রয়েছে।
- যেকোন সময় এই যোজনায় বিনিয়োগ বন্ধ করা যাবে। পুনরায় আবার কিস্তি প্রদান করে যোগ করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-য় আবেদনের যোগ্যতা :-
এই যোজনায় আবেদন করার জন্য যোগ্যতার মানদন্ডে উন্নীত হতে হবে।
- এই যোজনায় আবেদন করার জন্য ব্যক্তির বয়স ন্যূনতম 18 বছর থেকে সর্বাধিক 70 বছর হতে হবে।
- ব্যক্তির নামে নিজস্ব সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
- আবেদনকারীকে ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-তে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি :-
এই যোজনায় আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র তথা ডকুমেন্ট হল-
- এই যোজনায় আবেদন করার জন্য পরিচয় পত্র হিসেবে আধার কার্ড জমা করতে হবে।
- এছাড়া পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- বাসস্থানের প্রমাণ পত্র।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-র ক্ষেত্রে কভারেজ :-
- দুর্ঘটনার কারণে ইন্সুরেন্স হোল্ডারের মৃত্যু হলে নমিনি 2 লাখ টাকা পাবেন।
- ইন্সুরেন্স হোল্ডার দুর্ঘটনার কারণে স্থায়ীভাবে সম্পূর্ণ শারীরিক অক্ষম হয়ে গেলে, তিনি 2 লাখ টাকা কভারেজ পাবেন।
- ইন্সুরেন্স হোল্ডার কোনো দুর্ঘটনার কারণে স্থায়ীভাবে আংশিক অক্ষম হয়ে গেলে, তিনি। 1 লাখ টাকা বীমা কভারেজ পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-র অধীনে নন-কভারেজ :-
বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই বিমান দৌলতে ইন্সুরেন্স হোল্ডার কভারেজ পেয়ে গেলেও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। ইন্সুরেন্স হোল্ডার যদি আত্মহত্যা করেন সেক্ষেত্রে কোনরকম কভারেজ পাওয়া যাবে না। আবার যদি দুর্ঘটনা জনিত কারণে ব্যক্তি অস্থায়ী অক্ষম হয়ে যান, সেক্ষেত্রেও কোনো কভারেজ পাওয়া যাবেনা।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-র জন্য তালিকাভুক্তকরণ প্রক্রিয়া :-
এই প্রক্রিয়ায় এসএমএস অথবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে তালিকাভুক্তকরণ সম্ভব।
এসএমএস সক্রিয়করণের প্রক্রিয়া-
- এক্ষেত্রে প্রথমে নির্দিষ্ট টোল ফ্রি নম্বরে আপনাকে এসএমএস করতে হবে।
- তার জন্য ‘PMSBY Y’ টাইপ করে আপনাকে উত্তর পাঠাতে হবে।
- এরপর আপনার কাছে একটি রিপ্লাই মেসেজ আসবে।
- তারপর ব্যাংকের তরফ থেকে বাকি কাজ করে দেওয়া হবে।
ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে সক্রিয়করণ-
- এক্ষেত্রে সবার প্রথমে আপনার ব্যাংক একাউন্টের সাথে ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিষেবা থাকতে হবে। যদি ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা আপনার একাউন্টে থেকে থাকে তাহলে সেখানে লগইন করতে হবে।
- এরপর বীমা বিভাগে নেভিগেট করতে হবে।
- যদি একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, তবে যেই অ্যাকাউন্ট থেকে কিস্তি কাটা হবে সেটি সিলেক্ট করুন।
- এরপর সমস্ত বিবরণ দেখে নিয়ে সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন।
- তারপর রশিদ ডাউনলোড করে, রেফারেন্স নম্বরটি নিজের কাছে রেখে দিন।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-তে বীমা দাবি করার প্রক্রিয়া :-
- দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে বীমা দাবি করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
- দুর্ঘটনার কারণে ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁর দ্বারা মনোনিত (নমিনি) ব্যক্তিকে ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
- দুর্ঘটনার 30 দিনের মধ্যে বীমা কভারেজের ফরম ফিলাপ করে জমা করতে হবে। এর সাথে ফাস্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট, ডেথ সার্টিফিকেট বা কোন সিভিল সার্জন দ্বারা জারি করা অক্ষমতার প্রমাণপত্র কিংম্বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট জমা করতে হবে। এর পাশাপাশি ডিসচার্জ পেপার লাগবে।
- এত দূর পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংক একাউন্টের বিবরণ দেখা হবে। তারপর আগামী 30 দিনের মধ্যে এই কেস বীমা কোম্পানিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
- সবকিছু ঠিক থাকলে 30 দিনের মধ্যে টাকা নমিনী অথবা হোল্ডারের ব্যাংক একাউন্টে জমা পড়ে যাবে।
- যদি একাউন্ট হোল্ডার কাউকে নমিনি না করেন তাহলে আইনসম্মত উত্তরাধিকারী এই টাকা পাবেন।
- সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত হতে সর্বাধিক 30 দিন সময় লাগে।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন:
- অন্য কোনো বীমা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকলে কি এই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে?
হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা (Pradhan Mantri Suraksha Bima Yojna)-তে আবেদন করা যাবে।
- দুর্ঘটনার 30 দিনের মধ্যে বীমা কভারেজের ফরম ফিলাপ করে জমা না করা গেলে কী হবে?
সেক্ষেত্রে আপনি কভারেজ আর পাবেন না। তবে যথাযথ কারণ থাকলে ব্যাংক এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে।
- যেকোনো সময় কি নমিনি পরিবর্তন করা যায়?
হ্যাঁ, যেকোনো সময় নমিনি পরিবর্তন করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |
প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনার আবেদন পত্র ডাউনলোড লিঙ্ক | Click Here |