কিশোরী শক্তি যোজনা(Kishori Shakti Yojana) বা বলা যেতে পারে কৈশোর বালিকা ক্ষমতায়ন স্কিম। এটি আইসিডিএস অর্থাৎ ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত একটি যোজনা যার মাধ্যমে কিশোরীদের স্বাস্থ্য পুষ্টি এবং শিক্ষাগত দিকগুলি ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ১৯৯১ সালের ১লা নভেম্বর এই যোজনার পথ চলা শুরু হয়।
এই যোজনার লক্ষ্যই হলো কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ও ক্ষমতায়ন ঘটানো। আসুন জেনে নিই এই যোজনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে আজকের এই প্রতিবেদনে, যাতে করে এই যোজনা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়।
কিশোরী শক্তি যোজনার প্রকল্পের বিবরণ / Overview of Kishori Shakti Yojana
প্রকল্পের নাম | কিশোরী শক্তি যোজনা |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | ভারতের প্রতিটি রাজ্যে |
প্রকল্প শুরু করেছেন | তৎকালীন কেন্দ্র সরকার |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | নারী ও শিশু উন্নয়ন |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ১৯৯১ সালের ১লা নভেম্বর |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | ২০২৪ এ চালু আছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | ভালতের নাবালিকা যৌনকর্মী ও সমাজ থেকে বিতাড়িত মেয়েরা |
আবেদনের বয়স সীমা | বয়স হতে হবে ১১ বছর থেকে ১৮ বছরের মধ্যে |
কি কি সুবিধা পাবেন | ১. বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ২. স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা ৩. জীবনে দক্ষভাবে যাতে এইসব মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারে তার প্রশিক্ষণ ৪. সঠিক পুষ্টি প্রদানের ব্যবস্থা |
আবেদনের লিঙ্ক | Click Here |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Click Here |
কিশোরী শক্তি যোজনা কী(What is Kishori Shakti Yojana) ?
কিশোরী শক্তি যোজনা কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প যেখানে ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে শিক্ষা ও জ্ঞান প্রদান করা হয় এবং বিভিন্ন বৃত্তিমূলক দক্ষতার মাধ্যমে তাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। তাদের সমাজে উৎপাদনশীল ও অবদানকারী সামাজিক জীব হিসেবে গড়ে তোলাই হল কিশোরী শক্তি যোজনার একমাত্র লক্ষ্য।
কিশোরী শক্তি যোজনার উদ্দেশ্য / Objectives of Kishori Shakti Yojana
- কৈশোরকালটাই একটি বয়ঃসন্ধিকাল, যে সময়ে মেয়েদের পুষ্টি স্বাস্থ্য এবং বিকাশের দিকে বিশেষ নজর রাখা।
- বয়সন্ধিকালে কিশোরীদের যথেষ্ট পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
- কিশোরীদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার উন্নতিতে সাহায্য করতে হবে।
- কিশোরীদের বৃত্তিমূলক দক্ষতাগুলি ও গৃহভিত্তিক দক্ষতা গুলি উন্নত করবার সুযোগ করে দিতে হবে।
- এই বয়স সন্ধিককালে মেয়েদের সমাজের উপযোগী করে তুলতে হবে এমনকি উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে যাতে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে তার সহায়তা করতে হবে।
- আমাদের ভারতবর্ষের ২৪৩ মিলিয়নেরও বেশি কিশোর কিশোরী রয়েছে যাদের স্বাস্থ্য শিক্ষা অত্যন্ত আবশ্যিক। কিশোরী মেয়ে যারা আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ আগামী ভবিষ্যতে তারা কেউ হয়ে উঠবে নেতা উদ্যোক্তা মা কিংবা গৃহিণী তাই তাদের অপুষ্টি ক্ষুধা ও অসমতার অবসান ঘটাতে এই প্রকল্পের উদ্যোগ, যাতে তাদের স্বাস্থ্য পুষ্টির চাহিদাগুলি পূরণ করা যায়।
কিশোরী শক্তি যোজনাতে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস/ Documents required to apply for Kishori Shakti Yojana
- জন্মের শংসাপত্রের একটি কপি জমা দিতে হবে।
- আধার কার্ডের জেরক্স কপি জমা দিতে হবে।
- আই এর শংসাপত্রের একটি অনুলিপি জমা দিতে হবে।
- ডোমিসাইল সার্টিফিকেট এর একটি কপি জমা দিতে হবে।
কিশোরী শক্তি যোজনায় আর্থিক সহায়তা পরিমাণ / Amount of financial assistance under Kishori Shakti Yojana
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে প্রতিবছর আইসিডিএসকে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে যাতে করে আবেদনকারীদের প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা করা যায়।
কিশোরী শক্তি যোজনার অধীনে কি কি পরিষেবা পাবেন(What services will you get under Kishori Shakti Yojana) ?
১) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ:
যোগ্য প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যাতে মেয়েরা পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে সে দিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হবে। প্রশিক্ষণ প্রার্থীরা যাতে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে তারই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
২) স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যবস্থা:
প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুবিধা পাবে প্রতি ছয় মাস অন্তর চেকআপ করাতে পারবেন তারা গ্রামের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে।
৩) জীবন দক্ষতার শিক্ষা:
এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোরীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও সাক্ষরতার দিকটি বিশেষ নজর রাখা হবে।।
৪) পুষ্টি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা
কৈশোর কালটি একটি বয়স সন্ধিক্ষণ যে সময় মেয়েদের পুষ্টির মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। তাই এই সময় দরকার সুষম খাদ্য প্রাথমিক চিকিৎসার বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
কিশোরী শক্তি যোজনাতে আবেদনের জন্য যোগ্যতা / Eligibility Criteria for Kishori Shakti Yojana
ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এর প্রকল্পের অধীনে ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সে কিশোরী মেয়েরাই যোগ্য।
এই যোজনায় কিশোরী মেয়েদের উপর লক্ষ্য রাখা হবে যারা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে জড়ো হতে পারে। মূলত যৌনকর্মী ও সমাজ থেকে বিতাড়িত অভাগা মেয়েরাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য।
কিশোরী শক্তি যোজনাতে আবেদন করার পদ্ধতি/ How to apply in Kishori Shakti Yojana
কিশোরী শক্তি যোজনায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে প্রথমেই পৌঁছে যেতে হবে নিকটবর্তী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কিংবা শ্রম মন্ত্রণালয়ে যেখানে মেডিকেল অফিসার এর কাছ থেকে আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
আবেদনপত্র সংগ্রহের পর আবেদন পত্র টি সঠিকভাবে পুরনো করতে হবে। আবেদনপত্র পূরণের পর টাক্ক প্রতিনিধিদের দ্বারা যাচাই করা হবে। পর্যায়ক্রমে মূল্যায়নের পরেই কিশোরীদের নির্বাচন করা হবে।
কিশোরী শক্তি যোজনার মূল দিক গুলি / Key Aspects of Kishori Shakti Yojana
- দেশের প্রতিটি ব্লক কে এই যোজনার আওতায় আনা।
- ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সে কিশোরী মেয়েরাই এই যোজনার মূল লক্ষ্য।
- আইসিডিএস এই প্রকল্পে বার্ষিক 1.10 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য।
কিশোরী শক্তি যোজনা বাস্তবায়ন / Implementation of Kishori Shakti Yojana
এই কিশোরী শক্তির যোজনার সারাদেশে এখনো পর্যন্ত ৬১১৮টি ব্লকের বাস্তবায়িত হয়েছে। স্কিমটি ভারত সরকারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে আইসিডিএস এর পরিকাঠামোর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পেরেছে।
কিশোরী শক্তি যোজনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
কিশোরী শক্তি যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |
কিশোরী শক্তি যোজনার বিস্তারিত জানার লিঙ্ক | Click Here |
কিশোরী শক্তি যোজনা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন:
১) আইসিডিএস বলতে কি বুঝায়?
আইসিডিএস এর সম্পূর্ণ অর্থ হলো ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস। এটি হলো একটি সরকারি প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে ছ বছরের কম বয়সী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য জনিত খাদ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা টিকা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি পরিষেবা প্রদান করে থাকে।
২) কিশোরী শক্তি যোজনা বলতে কী বোঝায়?
কিশোরী শক্তি যোজনা হল সংক্ষেপে কে এসওয়াই যার লক্ষ্য হলো কিশোরী মহিলাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা যাতে করে কিশোরী নারীরা তাদের জীবনকে স্বনির্ভর ও উন্নত করতে পারে। মূলত কিশোরী শক্তি প্রকল্প লক্ষ্যই এটি।
৩) কিশোরী শক্তি যোজনা সুবিধা গুলি কি কি?
এই যোজনা ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী মহিলারা সুবিধা পান তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি দিকটি বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। অ্যানিমিয়া গলগন্ড ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়। ছোটখাটো রোগেরও চিকিৎসা করা হয়।
তারা যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ও জ্ঞানীরা আকাঙ্ক্ষার জাগ্রত করা যায় সেটিরও খেয়াল রাখা হয়। তাদের সংখ্যাগত যোগ্যতা ও সাক্ষরতার দিকটিও যথেষ্ট সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়।
৪) কিশোরী শক্তি যোজনা নাম নথিভুক্ত করনের ক্ষেত্রে কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন:
আয়ের শংসাপত্র
আধার কার্ড ।
বয়সের প্রমাণপত্র।
আবাসিক প্রমাণ পত্র।
৫) কিশোরী শক্তি যোজনার অধীনে যোগ্যতার মানদন্ডগুলি কি কি?
বয়স হতে হবে ১১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে এবং পারিবারিক আয় হতে হবে বছরে ৬৪০০ টাকা।