আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এবার যৌনকর্মীদের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের নয়া প্রকল্প। প্রকল্পের নাম “মুক্তির আলো প্রকল্প(Muktir Alo Scheme)”। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৫ সালের ৪ ঠা সেপ্টেম্বর রাজ্যের যৌনকর্মী ও সমাজের অভাগা নারীদের উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি শুরু করেন ।
মূলত তাদের জীবনকে মূল স্রোতে ফেরাতেই এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ নারী ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ দপ্তর ও পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ অনুপ্রেরণায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এই অভিনব প্রকল্প, যার নামেও রয়েছে অভিনবত্ব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একাধিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে বলেই জানিয়েছেন।
মুক্তির আলো প্রকল্পের বিবরণ / Overview of Muktir Alo Scheme
প্রকল্পের নাম | মুক্তির আলো প্রকল্প |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রকল্প শুরু করেছেন | মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তর |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ৪ ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৫ |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | ২০২৪ এ চালু আছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | এই পরিষেবা দিতে আগ্রহী ও যৌন এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। |
আবেদনের বয়স সীমা | নেই |
কি কি সুবিধা পাবেন | ১. যৌনকর্মীদের ৯ মাসের প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। এই সময় তাদের থাকা, খাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা সরকার করে দেবে। ২. ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ৩. যৌনকর্মীদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিত কাউন্সিলিং দেওয়া হবে। |
যোগাযোগের ঠিকানা | নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের অধীনস্থ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ নারী উন্নয়ন নিগমের অফিস- নির্মাণ ভবন,লবণ হ্রদ,কলকাতা–৯১। |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Click Here |
মুক্তির আলো প্রকল্প কি(What is Muktir Alo Scheme) ?
মুক্তির আলো প্রকল্পে যৌনকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। ছোট থেকে মাঝারি ব্যবসা শুরু করবার জন্য আর্থিক সাহায্য দেবে রাজ্য সরকার। এমনকি অভিনয়ের প্রশিক্ষণও ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। সবটুকুই তাদের স্বনির্ভর করে তোলবার এক প্রচেষ্টা। সাধারণ আর পাঁচটা মানুষের মতো তাদেরও সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবার সাধ জাগে কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে তারা তা পারে না।
তারা সবসময়ই এই সমাজে অবহেলিত এক শ্রেণী। তাদের সন্তানদেরও এই সমাজে তেমন ঠাঁই হয় না। কোন শিক্ষিত ভদ্র সমাজ তাদের মেনে নেয় না। চিরকালই বাঁকা চোখে দেখেছে তাদের। সমাজের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে যেন বঞ্চিত এক শ্রেণী। তাই এই বাংলার যৌনকর্মীদের জীবনে আলো দেখাতেই এই নামকরণ।
মুক্তির আলো প্রকল্পের উদ্দেশ্য / Objective of Muktir Alo Scheme
আমরা ২১ শতকের গোড়ায় দাঁড়িয়েও আজও পেশা দিয়ে বিচার করি মানুষদের, তাই আমাদের সমাজে যে সমস্ত যৌনকর্মী কিংবা কিন্নর মানুষ রয়েছেন তাদের দিকে আজও বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাই আমরা। তাদের নিয়ে সমালোচনা করি, তাদের পেশাটা কোনভাবেই আমরা মেনে নিতে পারি না। তারাও যে আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতোই মানুষ সে কথা ভাবি পর্যন্ত না। কেউ কেউ পেটের দায়ে বা কেউ কেউ অপহৃত হয়ে যৌনপল্লীতে ঠাঁই পেয়েছেন।
মুক্তির আলো প্রকল্পের সুবিধা / Benefits of Muktir Alo Scheme
- এই প্রকল্পের আওতায় যৌনকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাদের থাকা খাওয়ার সমস্ত রকম দায়িত্ব নেবে সরকার।
- তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে যাতে তারা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারে।
- মুক্তির আলো প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে স্পাইস গ্রাইন্ডিং ও ব্লক প্রিন্টিংয়ের ওপর। এছাড়াও থাকছে টায়ার টিউবের কীভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায় তার প্রশিক্ষণ ও ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজমেন্টের মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।
- ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্য জুড়ে অসংখ্য যৌনকর্মী এই প্রকল্পের সুবিধা লাভ করছেন। পরবর্তীকালে এই সমস্ত যৌনপল্লীর মহিলারা যদি সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার তাদের সমস্ত রকমের সুবিধা করে দেবেন।
- মুক্তির আলো প্রকল্পটিতে ৯ মাসের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যৌনকর্মীদের, যেখানে এই সমস্ত যৌনকর্মীদের জন্য মাসিক স্টাইপেন্ডেরও ব্যবস্থা রয়েছে, প্রশিক্ষণের শেষে তারা যদি কোন ব্যবসা শুরু করতে চান সে ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে তাদের।
- এই প্রথমবার রাজ্য সরকার কোন প্রকল্পে সম্পূর্ণ আর্থিক অনুদান প্রদান করছে, এরই পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে যৌনকর্মী ও হতভাগা মেয়েদের পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশ্যে।
- এই প্রকল্পের অধীনে যেসব যৌনকর্মীরা আছেন তাঁরা যদি ইচ্ছা প্রকাশ করেন তবে প্রশিক্ষণ শেষে ইচ্ছুক শিক্ষানবিশদেরও স্বাবলম্বী করার জন্য সরকার থেকে এই প্রকল্প থেকে এককালীন মূলধন প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।
কারা মুক্তির আলো প্রকল্পের সুবিধা পাবেন(Who will get the benefit of Muktir Alo Scheme) ?
সমাজের যৌনকর্মী বা নারী পাচারের শিকার যে সমস্ত মহিলারা বা মেয়েরা রয়েছেন, এছাড়াও যৌন কর্মীদের কন্যা সন্তানেরাও এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন।
আমাদের সমাজে এমন বহু মেয়েরা রয়েছেন যাদের ভিন্ রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের ঠাঁই হয় এই যৌনপল্লীতে কারণ তাদের নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় সমাজে তারা ঠাঁই পায় না। প্রিয়জন পরিবার ছেড়েও যারা এই পৃথিবীতে অনাথ হয়ে রয়েছে, সেই সমস্ত দুর্ভাগা মেয়েদের জন্য ভাবতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং কাউন্সিলিং করিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফেরানো, শুধু তাই নয় আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যেই মুক্তির আলো প্রকল্পের পথ চলা শুরু। শুধুমাত্র স্বনির্ভর তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
যারা এই দেহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও এই পেশার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চান, যারা মূলত পাচার হয়ে আসার ফলে এই পেশাটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে প্রতিনিয়ত বাধ্য হচ্ছেন তাদের জন্যই রোজকারের অন্য ব্যবস্থা করে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে এই প্রকল্পটি।এককথায় বলা যেতে পারে পাচার হওয়া নারী বা বিভিন্নভাবে নির্যাতিতদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই এই প্রকল্পের এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য ।
মুক্তির আলো প্রকল্পে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য যোগ্যতা / Eligibility to train women inMuktir Alo Scheme
যৌনপল্লীতে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এমন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এই পরিষেবা দিতে হবে।
মুক্তির আলো প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নেবার জন্য যোগ্যতা / Eligibility for training under Muktir Alo Scheme
সমাজের সেই সমস্ত দুর্ভাগা মহিলা, বালিকারা যারা নারী পাচারের শিকার এছাড়া যৌনকর্মীরা ও তাদের সন্তানরা নির্দ্বিধায় এই প্রকল্পে আওতায় প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
মুক্তির আলো প্রকল্পে যোগাযোগের বিবরণ / Muktir Alo Scheme Contact Details
মুক্তির আলো প্রকল্পের সম্পর্কে আরো যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে যোগাযোগ করতে হবে:
“নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের অধীনস্থ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ নারী উন্নয়ন নিগমের অফিসে ।
ঠিকানা হল: নির্মাণ ভবন,লবণ হ্রদ,কলকাতা–৯১”
সবশেষে বলতে হয় যৌনকর্মীদের আমরা আজও আতশ কাচের নিচে রেখে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলি, তাই তাদের জীবনে প্রতিমুহূর্তেই একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আদৌ কি কখনো এই সমস্ত যৌনকর্মী বা অভাগা নারীরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরবে তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা কিন্তু এই সমস্ত অনিশ্চয়তার মাঝেও রাজ্য সরকারের এই মুক্তির আলো প্রকল্প তাদের জীবনে এনে দিয়েছে আলো, বেঁচে থাকার আরও এক নতুন উদ্যোগ।
আশা করা যায় এই সমস্ত অভাগা নারীরা সমাজের মূল স্রোতে কিছুটা হলেও ফিরতে পারবেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুক্তির আলো প্রকল্পের মাধ্যমে যৌনপল্লীতে ঠাঁই পেয়েছে এমন ভাগ্য বিতারিত মেয়েদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আর সেখানেই রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের সার্থকতা।
মুক্তির আলো প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
মুক্তির আলো প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্ক | Click Here |