পরিছন্নতাই হোক আগামী ভারতের অঙ্গীকার, এমনটাই ভেবেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই নতুন ভারতের অঙ্গীকার স্বচ্ছ ভারত মিশন (Swachh Bharat Mission)। আজ থেকে ৯ বছর আগে ২০১৪ সালের ২রা অক্টোবর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা করেছিলেন রাজঘাটে। ২রা অক্টোবর প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন সেটি হল গান্ধী জয়ন্তী। ২০০৯ সালে চালু হওয়া নির্মল ভারত অভিযানের এটি একটি নব সংস্করণও বলা চলে।
নির্মল ভারত অভিযানের লক্ষ্য ব্যর্থ হলেও স্বচ্ছ ভারত মিশনের লক্ষ্য নিয়ে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নতুন দিল্লির রাজঘাট সমাধি পরিসরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের সূচনা করা হয় যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং রাস্তা পরিষ্কার করেন এবং তার সাথে হাত লাগিয়েছিলেন দেশের প্রায় ৩০ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীরা। আসুন জেনে নিই এই স্বচ্ছ ভারত মিশন সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে কীভাবে এই অভিযানকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য বদ্ধপরিকর কেন্দ্রীয় সরকার ।
স্বচ্ছ ভারত মিশন স্কিমের বিবরণ / Overview of Swachh Bharat Mission
প্রকল্পের নাম | স্বচ্ছ ভারত মিশন |
কোন কোন রাজ্যে চালু হয়েছে | ভারতবর্ষের প্রতিটি রাজ্যে |
প্রকল্প শুরু করেছেন | প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী |
কোন বিভাগের অন্তর্গত | গ্রামীণ, পানীয় জল ও স্যানিটেশন বিভাগ |
প্রকল্প শুরুর তারিখ | ২ যা অক্টোবর, ২০১৪ |
প্রকল্পের বর্তমান স্ট্যাটাস | ২০২৪ এ চালু আছে |
কারা আবেদন করতে পারবেন | |
আবেদনের বয়স সীমা | নেই |
কি কি সুবিধা পাবেন | ১. খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস নির্মূল ২. জল ও স্যানিটেশনের সুবিধা |
অনলাইনে আবেদন | Click Here |
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | Click Here |
স্বচ্ছ ভারত মিশন কখন শুরু হয়(When Swachh Bharat Mission started) ?
২০১৪ সালের ২রা অক্টোবর ক্লিন ইন্ডিয়া মিশন অর্থাৎ স্বচ্ছ ভারত অভিযানে দেশব্যাপী প্রচার চালায় ভারত সরকার যাতে করে খোলা জায়গায় মল মূত্র ত্যাগ ও কঠিন বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। তবে ২০১৪ সালের আগে ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার দ্বারা এই স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল যা ব্যর্থ হয়েছিল বলা চলে। স্বচ্ছ ভারত মিশন বা নির্মল ভারত অভিযান ২০০৯ সালের অভিযানের গঠিত নবসংস্করণ।
স্বচ্ছ ভারত মিশন চালু করার কারন কি(What is the reason for launching Swachh Bharat Mission) ?
পরিসংখ্যান বলছে ভারতে আনুমানিক ৬০০ মিলিয়ন মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। ভারত বিশ্বের সমস্ত দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। ভারতে এই উন্মুক্ত মলত্যাগ ও পানীয় বা গোসলের পানীয় পরিবেশকে দূষিত করছে। ২০১১ সালে জনগণনায় প্রকাশিত হয়েছিল যে, গ্রামে খুব কম সংখ্যক মানুষেরই টয়লেট রয়েছে তাই কেন্দ্রীয় সরকার এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্যই এই স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের বিষয়টি মাথায় আসে।
স্বচ্ছ ভারত মিশনের উদ্দেশ্য / Objectives of Swachh Bharat Mission
মানুষের জীবনযাত্রায় যাতে উন্নতি ঘটে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় জীবন যাত্রার মানের যাতে উন্নয়ন ঘটে সেটাই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। কেন্দ্রের উদ্যোগে ধীরে ধীরে সমস্ত রাজ্যেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
গ্রামীণ এলাকায় সব সময় দেখা যায় উন্মুক্তভাবে মলমূত্র ত্যাগ করা হয়, সেগুলোকে মূলত দূরীভূত করার জন্য টয়লেট নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও পর্যবেক্ষণের জন্য পরিকাঠামো গঠন প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বচ্ছ ভারত মিশন দেশের জনগণের জন্য কেন প্রয়োজন ?
স্বচ্ছ ভারত অভিযান চালু হলে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের প্রবণতা অনেকাংশই কমবে যার ফলে কলেরা বা ডায়রিয়ার মত জলবাহিত রোগের ঝুঁকি কিছুটা কমাবে। স্বচ্ছ ভারত অভিযান মানুষের জীবনে এনে দেবে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সুবিধা যাতে করে মানুষের অসুস্থতার ঝুঁকি ও বেশ কিছুটা কমবে।
এই স্বচ্ছ ভারত মিশনের মুল লক্ষ্য / The main goal of this Swachh Bharat Mission
- গণসৌচাগার
- ব্যক্তিগত পরিবারের টয়লেট
- তথ্য ও শিক্ষা যোগাযোগ এবং জনসচেতনতা বাড়িয়ে তোলা
- কমিউনিটি টয়লেট
- পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
স্বচ্ছ ভারত মিশন স্কিমের সুবিধা / Benefits of Swachh Bharat Mission
ভারতের স্বচ্ছ ভারত মিশন(Swachh Bharat Mission) কে দুটো ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে গ্রামীণ এবং শহর এলাকা ভিত্তিক হিসেবে। আসুন জেনে নিই সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে
১) স্বচ্ছ ভারত মিশন স্কিম মাধ্যমে শহরাঞ্চলে মানুষেরা কি সুবিধা পাবেন ?
শহর অঞ্চলে স্বচ্ছ ভারত মিশনে দায়িত্ব রয়েছে নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের ওপর। ৩৭৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা সহ ৪০৪১টি বিধিবদ্ধ শহরে স্যানিটেশন ও গৃহস্থালির টয়লেটের সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিশনও তৈরি করা হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনে পাঁচ বছরের জন্য আনুমানিক খরচ ৬২০০০৯ কোটি টাকা যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সহায়তা হিসেবে দেবে ১৪৬২৩ কোটি টাকা ।
স্বচ্ছ ভারত মিশনে ১.০৪ কোটি পরিবারকে আওতায় আনা হবে। ২.৫ লক্ষ কমিউনিটি টয়লেট সিট দেওয়া হবে। ২.৬ লক্ষ পাবলিক টয়লেট ছিল প্রদান করা হবে। প্রতিটি শহর অঞ্চলে কঠিন বর্জ্যের জন্য করা হবে সুব্যবস্থা।
২) স্বচ্ছ ভারত মিশন স্কিম মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা কি সুবিধা পাবেন ?
গ্রামীণ এলাকা স্বচ্ছ ভারত মিশন স্বচ্ছ ভারত গ্রামীণ মিশন নামে পরিচিত। অঙ্গওয়াড়ী স্কুলগুলিতে শৌচাগার নির্মাণ ও গ্রামীণ সমাজের কঠিন তরল বর্জ্যের জন্য সুবন্দোবস্ত করা। গ্রামীণ স্যানিটেশনের ওপর জোর দেওয়া। গ্রামীণ পরিবারগুলোকে আলাদা আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং কমিউনিটি টয়লেট তৈরি করা।
ভারতের সেরা ৫০ টি পরিচ্ছন্ন শহর কোন কোন রাজ্যে রয়েছে ?
- অন্ধ্রপ্রদেশের ৪টি
- গুজরাটে সর্বাধিক ১২টি শহর আছে।
- মধ্যপ্রদেশে ১১ টি
- মহারাষ্ট্রের ৩টি শহর
- তামিলনাড়ু তেলেঙ্গানা তে ৫টি করে শহর রয়েছে।
ভারতের সেরা ১০ টি পরিচ্ছন্ন আইকনিক স্থান যেগুলিকে পরিচ্ছন্নতার জন্য স্বচ্ছ ভারত মিশন এর তালিকাতে যুক্ত করা হয়েছে ?
স্বচ্ছ ভারত মিশনের(Swachh Bharat Mission) অধীনে ১০০টি ও আইকনিক ঐতিহ্য আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক স্থান গুলি পরিছন্নতার দিকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০০ টি স্থান কে বেছে নেওয়া হয়েছে স্বচ্ছ পর্যটন গন্তব্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে যেখানে ভারতের এবং বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা বাড়বে। কয়েকটি আইকনিক স্থান গুলির নাম উল্লেখ করব যেগুলিকে পরিচ্ছন্নতার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সেগুলি হল:
- জগন্নাথ মন্দির পুরী ওড়িশা
- আজমির শরীফ দরগা রাজস্থান
- বৈষ্ণোদেবী জম্মু কাশ্মীর
- ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস মহারাষ্ট্র
- তাজমহল উত্তর প্রদেশ
- স্বর্ণমন্দির পাঞ্জাব
- কামাখ্যা মন্দির আসাম
- তিরুপতি মন্দির অন্ধপ্রদেশ
- মীনাক্ষী মন্দির তামিলনাড়ু
- মনিকর্ণিকা ঘাট বারানসি উত্তর প্রদেশ।
স্বচ্ছ ভারত মিশনে কর্মক্ষেত্রগুলি শিক্ষা ও অন্যান্য পাবলিক জায়গা গুলি স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাই সমাজের প্রতিটি মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এই মিশনকে বাস্তবায়িত করার জন্য। সমস্যাগুলিকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।এটি ভারতের প্রতিটি নাগরিকদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য, তবেই একটি স্বচ্ছ নির্মল ভারত গড়ে উঠতে পারবে। প্রত্যেকের সচেতনতাই আমাদের এই স্বচ্ছ ভারত মিশনকে সফল করতে পারে।
গান্ধীজী যে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বচ্ছ ভারতের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন এই মিশনকে তিনি একটি গণ আন্দোলনে পরিণত করতে চান। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্য তাই বলেছেন নোংরা করবেন না, করতে দেবেন না। হিন্দিতে যার অনুবাদ করলে “না গান্দেগী কারেঙ্গে না কারনে দেঙ্গে”। আসুন আমরা সকলে অঙ্গীকারবদ্ধ হই নিজ নিজ এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি তাহলেই নির্মল ভারত গড়ে উঠবে।